বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে পানি সরিয়ে মাছ শিকার হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী তানোর উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারশোঁ ইউপি এলাকার আন্ধারসুরিয়া বিলের বন্যানিয়ন্ত্রিত বাঁধ কেটে পানি বের করে দেওয়ায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই বিলের পানি  ব্যবহার করে যুগযুগ ধরে চারপাশের অন্তত ৩ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেন কয়েক গ্রামের কৃষকরা। কিন্তু সেই পানি শিবনদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বিলের ইজারাদার। বাধটি কাটা পড়লে শীবনদীর পানি বেড়ে যাবে। ফলে বাড়তি পানির জন্য হাজার হাজার একর জমিতে বোরো চাষ করতে পারবে না কৃষকরা। এতে করে বাঁধ রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নচেৎ কৃষকরা ইজাদার ও লীজ প্রদান কারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করবেন কৃষকরা বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।
এরই মধ্যে খননযন্ত্র দিয়ে বাঁধের বেশকিছু অংশ কেটে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর পরও বাঁধ কাটা বন্ধ করেননি ইজারাদারের লোকজন। অবশেষে গত বুধবার সকালের দিকে বিল পাহারা দেওয়ার ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে এলাকার বিক্ষুব্ধ কৃষকরা। কৃষকদের দাবি, এ বিলের পানি ব্যবহার করে চারপাশের অন্তত ৩ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে বাঁকাপুর, ভেড়ি দুর্গাপুর, চাকদহ, খাগড়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের কৃষকেরা। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে বিলের পানি সরিয়ে নেওয়া হলে এসব জমিতে বোরো ধানের চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বর্ষা মৌসুমে চরম ঝুঁকিতে পড়বে শিবনদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ওই বাঁধ কাটা পড়লে তানোর উপজেলার শীবনদীর পানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে শতশত একর  জমি পানির নিচে অনাবাদি হয়ে পড়বে। পথে বসবে হাজার হাজার কৃষক। সেই সাথে প্রচুর খাদ্য ঘাটতির আশংকাও করছেন কৃষি বিদরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আন্ধারসুরিয়া বিল ৩ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে দক্ষিণ গোয়ালি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি সংগঠন। এ সমিতির কাছ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল এলাকার শরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বিলটি সাবলীজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। বর্তমানে বিলের পানি অনেক কমে গেছে। এ অবস্থায় বিলের পানি শুকিয়ে মাছ ধরার পাঁয়তারা করছেন ইজারাদার শরিফুল ইসলাম। তার খামখেয়ালীতে চাষাবাদ হচ্ছেনা বিলের জমিতে। যার কারনে চরম ক্ষুব্ধ কৃষকরা। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বাঁকাপুর গ্রামের কৃষক কমল মন্ডল বলেন, খননযন্ত্র দিয়ে এরই মধ্যে বিলের ভেতর থেকে খাল খনন করে বাঁধ পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়েছে। এখন বাঁধ কেটে সেই পানি শিবনদে দেওয়ার চেষ্টা করছেন ইজারাদার শফিকুল। পানি শুকিয়ে গেলে বিলে বোরো ধানের চাষ করতে পারবেন না তাঁরা।
চাকদহ গ্রামের কৃষক মুক্তিযোদ্ধা কামিজ উদ্দিন মন্ডল বলেন, বিলের পানি ব্যবহার করে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ বোরো ধানের চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে যুগযুগ ধরে। এটিই তাঁদের একমাত্র ফসল উপার্জনের উপায়। আবার বর্ষা মৌসুমে বিলে থইথই করে পানি। তখন মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন এলাকার লোকজন। এলাকার কৃষকদের বাধা উপেক্ষা করে বিলের সেই পানি সরানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে ইজারাদার ও তার লাঠিয়াল বাহিনী। ইজারাদার ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বাঁধ কাটছেন। ভয়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা। মামলা হামলার ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন নিয়োমিত ইজারাদার ও তার লাঠিয়াল বাহিনীরা।
তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউপি, তানোর পৌরসভা ও চান্দুড়িয়া ইউপির হাজার হাজার কৃষক শিবনদীর বিলের জমিতে বোরো চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। পৌর এলাকার কৃষক মফিজ, ফারুক, ইদ্রিসসহ অনেকে জানান, বাঁধ কাটা হলে বিলের জমিতে বোরো চষ হবে না। বোরো চাষ করে বছরের খাবার জোগাড় করা হয়। বাঁধ কাটা পড়লে পথে বসতে হবে। ইজারাদারা শরিফুল ইসলাম বলেন, বিলে এখনও অনেক পানি। পানি কমাতে না পারলে মাছ ধরা যাবে না। তাই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বোরো আবাদের উপরে কোনো প্রভাব পড়বে না।
ইজারাদার অভিযোগ করে বলেন, ‘বুধবার সকালে বিলের পাহারায় থাকা লোকজন চৌবাড়িয়া বাজারে নাস্তা করতে যান। এ সুযোগে এলাকার লোকজন পাহারাঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ বিষয়ে আমি আইনি পদক্ষেপ নিব। ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন চিকিৎসার জন্য ভারতে আছেন। তিনি এই প্রতিবেদন দেখে ফেসবুকে লিখেন, আমি চিকিৎসার জন্য ভারতে থাকায় একাজ করেছে। আমি এসে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে।
মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর-এ-আলম সিদ্দিকী বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *