উপজেলা চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া 

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের সীমান্তবর্তী নওগাঁর মান্দা উপজেলা চেয়ারম্যানের করা সংবাদ সম্মেলন নিয়ে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, বইছে মুখরুচোক নানা গুঞ্জন, প্রতিনিয়ত গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে।
প্রসঙ্গত, মান্দা থানায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভারশোঁ ইউপি ছাত্রলীগ সভাপতির করা লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ জুন বৃহস্প্রতিবার ও ১৬ জুন শুক্রবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘চেয়ারম্যানের হাতে ছাত্রলীগ নেতা লাঞ্ছিত’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
এদিকে প্রকাশিত এসব খবরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে গত ১৬ জুন শুক্রবার সকালে মান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোল্লা মোঃ এমদাদুল হক নিজ কার্যালয়ে  সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তার কন্যা মান্দা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সিদ্দিকা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমদাদুল হক বলেন, গত দুই-তিন দিন ধরে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও পত্রিকায় তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে ‘মান্দা উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে লাঞ্চিত ছাত্রলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদে যেসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা মনগড়া, কাল্পনিক ও ভিত্তিহীন। তাঁকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ‘গত ১৩ জুন মান্দার পিআইও দপ্তরে ছাত্রলীগ পরিচয় দানকারী জামাল উদ্দিন নামের কারও সঙ্গে আমার দেখা কিংবা কথা হয়নি। এ কারণে তাঁকে সেখানে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
এ ছাড়া উপজেলার মজিদপুর ফাজিল মাদ্রাসায় জামাল উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তিকে কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি ওই প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। আমি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ওই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। কাজেই জামাল উদ্দিন নামের ব্যক্তির কাছ থেকে ওই পদে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’ বর্তমান ওই প্রতিষ্ঠানে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন আমার মেয়ে ও মান্দা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা সিদ্দিকা। শুনেছি সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠানে কিছু পদে জনবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। মাদ্রাসা ও নিয়োগ বোর্ড কাকে কোন পদে নিয়োগ দেবেন এটি সম্পূর্ণ তাদের বিষয়। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’তিনি অভিযোগ করেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করে আসছে নিজ সংগঠন আওয়ামী লীগের সংগঠনপরিপন্থী কাজে জড়িত কতিপয় ব্যক্তি। এটিও তারই একটি অংশ। আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে ওই মহলটি এসব অপপ্রচারে আবারও লিপ্ত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে মজিদপুর ফাজিল মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাহবুবা সিদ্দিকা বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু জনবল নিয়োগের জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এখনও সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। এই অবস্থায় নিয়োগ বাণিজ্যের যে অভিযোগ করা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে এই সংবাদ সম্মেলনের খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক জৈষ্ঠ নেতা বলেন, ঘটনা না ঘটলে মোল্লা এমদাদুল হকের মতো প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে কোনো ছাত্রলীগ নেতা থানায় অভিযোগ করার মতো সাহস রাখে, আসলে তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা ধামাচাঁপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, বিগত ২০০৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হন এমদাদ। তখন তার সম্পদ কি পরিমাণ ছিল, এখন কি পরিমাণ আছে। তিনি এসব সম্পদ অর্জন করলেন কি ভাবে কোন পথে, আর সরকারি কোষাগারে কি পরিমাণ সম্পদের আয়কর দিয়েছেন, এসব অবশ্যই অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
স্থানীয়রা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যে, সরকারি সম্পত্তি জবরদখল, সরকারি গুদামে ধান-চাল-গম সরবরাহ, পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বানিজ্যে, খাস-পুকুর জলাশয় ও বালু মহল নিয়ন্ত্রণ করে এমদাদ রাতারাতি টাকার কুমির
হয়েছেন। দৃশ্যমান সম্পদের মধ্যে উপজেলার ছোটবেলালদহ ৪টি,প্রসাদপুর গোলচত্ত্বর একটি, উপজেলা চত্ত্বরের প্রধান সড়কের দক্ষিন রাস্তায় একটিসহ মোট ৮টি ২তলা থেকে ৪ তলা বিশিষ্ট আলিশান প্রাসাদ গড়েছেন। রয়েছে ৪-৫টি নোহা-হাইস চার চাকার গাড়ি, আছে ইট ভাটা। এসব তো দৃশ্যমান তাহলে অদৃশ্য কতো সম্পদ রয়েছে।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *