যুক্তরাষ্ট্রের কাছে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা চাইবে

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত তুলায় তৈরি পোশাক তাদের দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব দেওয়া হবে।

বুধবার ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠকে এসব তুলে ধরা হবে। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা শ্রম অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

এছাড়া শ্রম অধিকার, ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য এবং শ্রমবিষয়ক অন্যান্য অন্যায্য বিষয়, ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশনসহ বেশকিছু ইস্যু তুলবে দেশটি।

তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বৈঠক একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষণ মহল। তাদের মতে, এটি নির্বাচনে একধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বৈঠককে ঘিরে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমনটি আভাস দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে পোশাক তৈরির পর যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে, এটা অনেকটা বাইব্যাকের মতো। তাই তৈরি পোশাকের পুরো মূল্যের ওপর শুল্কারোপ যৌক্তিক নয়। এ কারণেই আমরা শুধু বাংলাদেশে মূল্য সংযোজনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করব। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বৈঠক শুরু হবে বেলা ১২টায়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপনকান্তি ঘোষ। আর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির বাণিজ্য বিভাগের (ইএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী ব্রেডন লিঞ্চ।

বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসসহ ১৩ সদস্যের ইউএসটিআর প্রতিনিধি।

সূত্রমতে, টিকফা বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার জন্য ২০টি এজেন্টা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজার সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রেজিস্ট্রেশন সহজ এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি এক্সেস সুবিধা চাওয়া হবে। পাশাপাশি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও ৬ বছর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ও ট্রিপস বেনিফিট অব্যাহত রাখার বিষয়ে ডব্লিউটিওতে এলডিসি গ্রুপের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইবে ঢাকা।

আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় ডাব্লিউটিও-এর মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে এলডিসির প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন সহজ করা এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

এছাড়া মার্কিন বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা এদেশ থেকে নেওয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। কৃষি বায়োটেকনোলজি ডায়ালগ এবং বাংলাদেশের বীজ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

এছাড়া মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, শ্রম সমস্যা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

প্রসঙ্গত, টিকফা স্বাক্ষর হয় ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর। এর আগে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ রূপরেখা চুক্তি (টিফা) নামে ২০০৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে চুক্তি স্বাক্ষরের তাগিদ দিতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। টিফাই পরে টিকফা হয়।

চুক্তিতে বলা হয়, বছরে কমপক্ষে একবার এ ফোরামের বৈঠক হবে। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় প্রথম এবং ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়াশিংটনে দ্বিতীয় বৈঠক হয়।

এভাবে ঢাকা-ওয়াশিংটন, ওয়াশিংটন-ঢাকা করে প্রায় প্রতিবছরই টিকফা ফোরামের বৈঠক হয়। কিন্তু গত দশ বছরে ৬টি বৈঠক হলেও দৃশ্যমান কোনো ফল দেখা যায়নি।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *