ভিসা নিষেধাজ্ঞা: নির্বাচনী দায়িত্ব নিয়ে চিন্তায় পুলিশ কর্মকর্তারা

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি মানসিক চাপে পরিণত হয়েছে। আমার কাজের দায় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বহন করতে হবে, সেটা নিশ্চয়ই আমি চাইব না। তাই নির্বাচনের সময়টুকু আড়ালে-আবডালে থেকে পার করে দেওয়ার চেষ্টা করব।’ আলাপকালে কথাগুলো বললেন ঢাকার বাইরে কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা।

ওই পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল রোববার পুলিশ সদর দপ্তরে পরিচিত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার কাছে এসেছিলেন বদলি নিয়ে তদবির করতে। যুক্তরাষ্ট্র গত শুক্রবার ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরুর ঘোষণা দেওয়ার পর পুলিশের কর্মকর্তাদের মধ্যে একধরনের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কারা এর আওতায় পড়বেন, তা নিয়েও আছে নানা মত। তবে পুলিশের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ভিসা নীতি নিয়ে কর্মকর্তাদের এত চিন্তার কিছু নেই। যাঁর যে দায়িত্ব, সেটা যথাযথভাবে পালন করলেই এ নিয়ে ভয় থাকার কথা নয়। এই ভিসা নীতির আওতায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী সরকারি ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচার বিভাগের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।

মার্কিন ভিসা নীতি পুলিশের কাজে প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা বলেন, পুরো বিষয়টা নিয়ে এখনো তাঁরা অন্ধকারে রয়েছেন। কোন পর্যায়ের কর্মকর্তা এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছেন, কোন ধরনের কাজের জন্য তালিকা করা হচ্ছে, এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া দরকার। এ নিয়ে সব কর্মকর্তার মধ্যে একধরনের চাপা উদ্বেগ বিরাজ করছে। বিষয়টি নিরসনে পুলিশ সদর দপ্তরে বৈঠক করা প্রয়োজন।

ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরুর পর গত দুই দিনে পুলিশের মাঠপর্যায়ের পরিদর্শক থেকে উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার ১০ জন ও সাবেক ২ জন মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। বর্তমান কর্মকর্তারা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আইনের মধ্যে থেকে মানবাধিকার সমন্বিত রেখে কাজ করতে পারলেও নির্বাচনের সময় মাঠে কাজ করার সময় কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, তা নির্ণয় করা তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। নির্বাচনের সময় পুলিশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করলেও দিন শেষে খারাপ কিছুর দায়ভার পুলিশকেই নিতে হয়। তাই ওই সময়ে ঝামেলা এড়াতে মাঠে না থেকে অফিসে কাজ করতে আগ্রহী তাঁরা।

রাজশাহী রেঞ্জের একটি থানার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, প্রায় আট বছর থানায় ওসির দায়িত্বে আছেন। এবার দপ্তরে কাজ করতে চান। তাঁর কেউ আমেরিকায় যাবে না। কিন্তু নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা পুলিশ সদস্যদের তালিকায় নাম থাকলে সেটা হবে বিব্রতকর।

বর্তমান কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেলেও সাবেক কর্মকর্তাদের মত ভিন্ন। পুলিশের সাবেক আইজি নুরুল হুদা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের ওপর মার্কিন ভিসা নীতি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের কাজে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

নির্বাচন বা নির্বাচনের বাইরে পুলিশের ওপর যে দায়দায়িত্ব থাকবে, ঊর্ধ্বতনসহ মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তা যথাযথভাবে পালন করলে এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তিনি বলেন, এর বাইরে যদি পুলিশ সদস্যদের কেউ এই তালিকায় থাকেন, অল্প কয়েকজন সদস্যের জন্য এত বড় শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না।

একই রকম কথা বলেছেন পুলিশের আরেক সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হক। তিনি বলেন, শুধু মানবাধিকারের ব্যাপারে সতর্ক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজ করবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। অতিরিক্ত কিছু না করলেই হলো।

এদিকে গতকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপির মুখপাত্র ও উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, দুই লাখ পুলিশ সদস্যের পরিবারের কতজনই আর যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান? খুবই নগণ্য কিছু সদস্য হয়তো আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন অথবা ছেলেমেয়েদের পাঠানোর চিন্তা করেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ পুলিশের ওপর এই ভিসা নীতির কোনো প্রভাব পড়বে না।

ভিসা নীতির সঙ্গে ডিএমপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, পুলিশ সংবিধান ও পুলিশ প্রবিধান অনুযায়ী তাঁদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
সূত্র: আজকের পত্রিকা

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *