দেশের অগ্রযাত্রা যেন থেমে না যায়: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সবকিছুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার যতটুকু করার আমি করে যাচ্ছি। এরপর যেন বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা থেমে না যায়। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যারা শিক্ষার্থী যাদের বয়স ২০ বছর তারা উপলব্ধিও করতে পারবে না ২০ বছর আগের বাংলাদেশ কী ছিল। সেখানে ক্ষুধা ছিল, দারিদ্র্য ছিল, জ্ঞান-বিজ্ঞানে কোনো অগ্রগতি ছিল না। ১৯৯৬ সাল থেকেই তো আমরা প্রযুক্তি শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার এটাই চাওয়া থাকবে আধুনিক জ্ঞান- বিজ্ঞানে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমার যতটুকু করার আমি করে যাচ্ছি। এরপর যেন বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা থেমে না যায়। আজকে বাংলাদেশে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করতে পেরেছি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি করতে পেরেছি। যদিও কোভিড আমাদের ও বিশ্বব্যাপী একটি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দেশকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে উন্নত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। আমাদের বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। লেখাপড়া শিখে গ্রামের মানুষদের ভুলে গেলে চলবে না। তাদের যত উন্নতি হবে, দেশেরও তত উন্নত হবে। মুষ্টিমেয় লোকের উন্নতি নয়, উন্নতি হতে হবে সর্বজনীন। তৃণমূল থেকে এ উন্নয়ন হতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ভাষা আন্দোলন শুরু হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলন থেকেই সংগ্রামের শুরু। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাঙালির জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা-চেতনা ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল।’ ভাষা আন্দোলনের সময়ই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ দেশকে স্বাধীন করতে হবে, বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে হবে। সেভাবেই তিনি ধাপে ধাপে এগিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্যই ছিল এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে মুক্ত করা। তার মধ্যে আশ্চর্য একটা শক্তি ছিল। তিনি ভবিষ্যতে কী হবে বলতে পারতেন। সেভাবেই তিনি পরিকল্পনা নিয়েছেন। তিনি যখন-তখন স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ছেষট্টির ছয় দফা এবং সত্তরের নির্বাচনের মধ্যেই ছিল স্বাধীনতার কথা।

বিভিন্ন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ছয় দফা আন্দোলন এবং সত্তরের নির্বাচন। অনেকেই তখন বঙ্গবন্ধুকে নির্বাচনে অংশ নিতে নিষেধ করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, বাঙালির পক্ষে কে কথা বলবে সেটা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডের মধ্যেই ছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি, স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং উন্নতি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তখন তার সঙ্গে অনেক ছাত্রনেতাই বহিষ্কৃত হন। তবে অনেকে মুচলেকা এবং জরিমানা দিয়ে ছাত্রত্ব ফেরালেও বঙ্গবন্ধু তা করেননি। তিনি বলেছিলেন, মুচলেকা এবং জরিমানা দেওয়া মানেই অন্যায় অপবাদ মেনে নেওয়া। এর ফলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কার হওয়ার পর আমার দাদা তাকে বিলেতে গিয়ে ব্যারিস্টারি পড়তে বলেছিলেন। কিন্তু তিনি এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিলেতে পড়তে যাননি। তিনি আইন বিভাগের ছাত্র হয়েও জাতির জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে আইন পড়া শেষ করতে পারেননি। মাঝে মাঝে তিনি ঠাট্টা করে বলতেন, পাকিস্তানিরা তার বিরুদ্ধে এত মামলা দিয়েছিল যে, সেই মামলা মোকাবিলা করতে করতেই তিনি সব আইন শিখে গিয়েছিলেন।

২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়া এবং ডক্টর অব ল’জ ডিগ্রি প্রদান করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, এই জাতিকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি নিজের জীবনের জন্য কিছু চাননি। তার লেখা বইগুলো পড়লে এদেশের সংগ্রামের অনেক ইতিহাস জানা যাবে। বর্তমান শিক্ষার্থীরা এই বইগুলো পড়লে দেশের রাজনীতি এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে।

কন্যা হিসেবে পিতা মুজিবের মূল্যায়ন করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা দেশের মানুষকেই বেশি ভালোবেসেছেন। দেশের মানুষের জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তিনি দেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসা দিয়েই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে মাত্র তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে দিয়ে গেছেন। জাতির পিতার নেতৃত্বের কারণেই তখন ১২৬টি দেশ আমাদের স্বীকৃতি দেয়।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আমাদের শৌর্যবীর্য হারিয়ে গিয়েছিল। বিশ্বে বিজয়ী জাতি হিসেবে যে সম্মান ছিল, সেটাও হারিয়ে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৯৬ সাল এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই ২৯ বছর আমরা খুনি এবং দুর্ভিক্ষময় জাতি হিসেবে পরিচিত ছিলাম। তখন উন্নয়ন পিছিয়ে গিয়েছিল এবং মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতো।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *