মহাসড়কে বিপজ্জনক বানেশ্বর হাট, বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

মো: মেহেদী হাসান পুঠিয়া(রাজশাহী): রাজশাহীর বৃহত্তর বানেশ্বর হাটের জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দখল নিয়ে নিজস্ব গোডাউন তৈরি করেছেন। এ কারণে হাটের দোকান বসে ও কেনাবেচা করা হয় মহাসড়কের ওপর। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে উপর বৃহত্তর হাট বসায় তীব্র যানজট লেগেই থাকছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী ও পথচারীদেরকে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাট ইজারার নামে প্রতি বছর সরকারের কোষাগারে যেমন কোটি কোটি টাকা জমা হয়, তেমনি পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পকেটেও ঢোকে লাখ লাখ টাকা। কিন্তু জনসাধারণের ভোগান্তি নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে ভোগান্তির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে মাঝে-মধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরকারি বিধি মোতাবেক হাটের জায়গায় কোনো ধরনের স্থায়ী ঘর নির্মাণ ও দখল অবৈধ। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা হাটের জায়গায় দোকানঘর ও গোডাউন নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে তাদের নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অনেকেই আবার গোডাউন ঘরগুলো ভাড়া ও বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। বানেশ্বর হাটের জায়গা ক্রমেই বেদখল হচ্ছে। তাই স্থানীয় কৃষক ও ফড়িয়ারা ফসলাদি বিক্রির জন্য মহাসড়কের দুপাশ দখল করে বসছেন। ফলে বানেশ্বর হাটের দিন ভোর থেকে সারা দিন প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে।

পহেলা বৈশাখে নতুন ইজারাদার হাট হাতে পেয়েই যানজট কমানোর জন্য দুইদিন বাড়িয়ে সপ্তাহে চার দিন হাট বসানোর জন্য মাইকিন করে ঘোষণা দিয়েছেন। আগে থেকেই কলা হাট সপ্তাহে ৪ দিন থাকায় পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচা সবজির হাটও দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ইজারাদাররা।

সরোজমিনে রাজশাহীর বানেশ্বর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কটি এমনিতেই অনেকটা ব্যস্ততম। নাটোর পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় এই রাস্তাটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে মাঝে-মধ্যেই ঘটে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কৃষি ফসল কেনা-বেচার জন্য উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ হাটের মধ্যে একটি হলো বানেশ্বর। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানাগেছে, বানেশ্বর হাট প্রায় সাড়ে ১১ একর জমির উপর অবস্থিত।

এই বাজারের একেবারে মাঝখান দিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক। বাজার এলাকার কিছু অংশ ফোর লেন হলেও বাঁকি অন্তত ৯০ ভাগই দুই লেন মহাসড়ক। আবার এই বাজারের পাটসহ অধিকাংশ কৃষিপণ্য বিক্রি হয় রাস্তার দুই ধারে।

ব্যবসায়ীরা জানান, মুল হাট সপ্তাহে ২ দিন শনিবার ও মঙ্গলবার এখন শুনছি নতুন ইজারাদাররা সপ্তাহে চারদিন হাট বসাবে। শুক্র-শনি এবং সোম-মঙ্গলবার বসে কলার হাট। আর শনিবার ও মঙ্গলবার বসে মূল হাট। ফলে এই দুই দিন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় যাত্রীসাধারণ ও পথচারীদের। হাটের কলেজ গেট থেকে একেবারে শিবপুর পর্যন্ত প্রায় দেড়-দু’ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকে সেই ভোর থেকে। চলে বেলা ১২ টা পর্যন্ত। কারণ এ হাটে ভোর বেলা থেকেই শুরু হয় কেনা-বেচা। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসছে এই হাটটি। এখন হাটে কৃষিপণ্য কেনা-বেচার পরিমাণ বেড়েছে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুন। আবার ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু‘ হাটের বাড়তি কোনো সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে একেবারে মহাসড়কের ওপরেই বসে অধিকাংশ দোকান-পাট এবং চলে কৃষি পণ্য কেনা-বেচার কাজ। হাটের ভিতর দিয়ে, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, দ্রুতগামী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহন চালাতে হয় খুব ধীর গতিতে। তার পরেও অধিকাংশ সময় যানজটের কারণে যানবাহন আটকে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা।

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসের চালক ইলিয়াস বলেন, ‘এই রাস্তাটি এমনিতেই ব্যস্ততম রাস্তা। যানজট না থাকলে ঢাকা থেকে সর্বোচ সাড়ে ৪ ঘন্টায় রাজশাহীতে পৌঁছানো যায়। কিন্তু‘ যানজটের কারণে কোনো দিনই প্রায় সাড়ে ৫ ঘন্টার আগে আমরা পৌঁছাতে পারেনি। এর ওপরে সপ্তাহের দুই দিন বানেশ্বর হাটের কারণে আরও ২০-৩০ মিনিট বা ঘন্টাও পার হয়ে যায় এই হাট পার হতে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে আমাদের মতো চালকসহ হাজার হাজার যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে ফেলানো হচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো প্রতিকার করে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটের ইজারাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ৫ কোটি ৮৬ ল ৯৬ হাজার ৩শ টাকা দিয়ে হাটের এক বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। কিন্তু জায়গার সঙ্কট থাকার কারণে দুই হাটের দিন ভিড় লেগেই থাকছে রাস্তার ওপরে। এতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমরা মহাসড়কে যানজট এড়াতে সপ্তাহে দুই দিন হাট বাড়িয়েছি। আগে শনিবার ও মঙ্গলবার হাট ছিলো এখন থেকে শুক্রবার ও সোমবার পেঁয়াজ, রসুন ও শাকসবজির হাট দেওয়া হয়েছে। যেমন আগে থেকেই কলা হাট ছিলো সেই কারণে কিন্তু কলা হাটে যানজট হয়না তাই আমরা মহাসড়কে যানজট এড়াতেই সপ্তাহে ৪ দিন হাট দিয়েছি।

বানেশ্বর হাটের সাবেক ইজারাদার ওসমান আলী বলেন, আমরা নতুন করে আবার পুনরায় হাট পেয়েছি। যানজটের কারণে যাতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। তাই আমরা বানেশ্বর মহাসড়কে যানজট এড়াতেই সপ্তাহে ৪ দিন হাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে করে শুক্রবার ও সোমবার যেমন কলা হাট বসে ঠিক সেই ভাবেই পেঁয়াজ, রসুন ও শাকসবজির হাট বসবে। প্রশাসন যেভাবে হাট বুঝিয়ে দিয়েছে, সেভাবেই আমরা খাজনা (টোল) আদায় করবো। হাটের উন্নয়ন করতে হলে সেটি প্রশাসন করবে।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,কে,এম নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, ‘মহাসড়কের ওপর হাট বসার কথা না। যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে হাট বসে আসছে সেহেতু সবাইকে নিয়ে বসে এটা নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। আমি বিষয়টি নিয়ে দেখছি কি করা যায় । আর আমরা ১ বছরের জন্য হাট লিজ দিয়েছি তারা সপ্তাহে কয়দিন হাট বসাবে সেটি তাদের বিষয়।

স্ব.বা,/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *