থাপ্পড় মেরে স্কুলছাত্রের কানের পর্দা ফাটালো অধ্যক্ষ

জাতীয় লীড শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় ভাদুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের থাপ্পড়ে এক ছাত্রের কানের পর্দা ফেটে শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রের নাম সাকিল আহাম্মদ (১৫)।

সাকিল আহাম্মদ ভাদুরিয়া ইউনিয়নের কাশিয়াড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক মিজানুর রহমানের ছেলে। সে নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া ইউনিয়নের ভাদুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র।

এদিকে এ থাপ্পড়ের কথা প্রকাশ করায় অধ্যক্ষ ওই ছাত্রকে অন্যত্র ভর্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে বুধবার অভিযোগ করেন সাকিলের মা মেনু আক্তার।

তিনি বলেন, ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজটি বাড়ির কাছে হওয়ায় কাছের শিক্ষার্থীরা এখানে লেখাপড়া করে। দুই সপ্তাহ আগে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের থাপ্পড়ে সাকিলের কানের পর্দা ফেটে যায়। ফলে সে বাম কানের শ্রবণশক্তি হারায়।

সাকিলের মা আরও বলেন, হামার ছোলকে নতুন ভর্তি করাছি স্কুলে, ছোল হামার বুঝে নাই, দুপুরে কলেজের ছোলেরা বাড়িতে আসোচলো, সে জন্য মোর ছোলও বাড়িত আসবার চাছল, তখন প্রিন্সিপাল চারটা চড় মারিচে। এখন মোর ছোলটা কানে আর শুনতে পাওছে না। কারও কাছে বিচার দিলে হামার ছোলক আর ওই স্কুলত থুবে না, স্কুল থাকে বার করে দিবে। এই বলে কাঁদতে থাকেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার ছেলে প্রথমে বলেনি অধ্যক্ষ তার কানে থাপ্পড় মারছে। কারণ এ কথা কাউকে জানালে স্কুল থেকে বাহির করে দিবে। এদিকে যখন কানে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, তখন সব জানতে পারি, সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে ব্যথা আরও বেশি হলে রংপুর নিয়া যাই। বর্তমান রংপুরের চিকিৎসকের চিকিৎসা চলছে।

অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে। অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম চিকিৎসার জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছে। এখন আর কোনো খোঁজখবর রাখে না। আমার ছেলে আগে যে মাদ্রাসা থেকে জেএসসি পাস করছে, সেখানে ভর্তি করার জন্য চাপ দিচ্ছেন তিনি।

সাকিলের কাছে জানতে চাইলে বলে, আমি নতুন ক্লাসে মাত্র দুদিন ক্লাস করেছি। অধ্যক্ষকেও চিনি না। টিফিনের সময় কলেজের বড় ভাইয়েরা বাড়িতে চলে যাচ্ছে। তাই আমিও বাড়ি যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় স্যার আমাকে কানে থাপ্পড় মারতে শুরু করে। তখন আমি অনেকক্ষণ চোখ দিয়ে কিছু দেখতে পাইনি।

পরে অধ্যক্ষ স্যার বলেছে, বাড়িতে গিয়ে যদি বলিস এই স্কুল থেকে বাহির করে দেব। তাই প্রথমে কাউকে বলিনি। যখন প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছিল, তখন বাড়িতে মাকে বলেছি। এখন অধ্যক্ষ আমাকে আগেকার মাদ্রাসায় ভর্তি হতে বলছে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম জানান, আমি কোনো ছাত্রকে থাপ্পড় মারিনি। এ বিষয়টি আমার মনে পড়ছে না। আমি শুনছি সাংবাদিকরা দৌড়াদৌড়ি করছেন। আপনারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। ওই ছাত্রকে চিকিৎসা বাবদ কোনো অর্থ বা টাকা দিইনি। এ ছাড়া তাকে অন্য কোথাও ভর্তি হতে বলিনি।

ভাদুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আমির হোসেন জানান, আমার কাছে ছাত্রকে থাপ্পড় মারার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, এ বিষয়টি শুনেছি– তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। কোনো শিক্ষার্থীকে থাপ্পড় বা শারীরিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না। আমার কাছে কোনো অভিযোগ এলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার নির্যাতন করা যাবে না। ভাদুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সূত্র: যুগান্তর।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *