বাজেট পাশের আগে মোবাইলের কলরেট বাড়ানোয় কড়া চিঠি বিটিআরসির

তথ্যপ্রযুক্তি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: চূড়ান্ত বাজেট পাসের আগেই মুঠোফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেটে বাড়তি শুল্ক কেন আরোপ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে মুঠোফোন অপারেটরদের কড়া ভাষায় ই-মেইল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

সংস্থাটির পক্ষ থেকে অপারেটরদের বলা হয়েছে, বাজেটে যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, তা ইতোমধ্যেই আরোপ করা শুরু করেছে অপারেটরেরা। বিষয়টি বিটিআরসির নজরে এসেছে। এটা প্রমাণিত হলে নজিরবিহীন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ক্ষেত্রে কী কী কঠোর শাস্তি হতে পারে, তাও উল্লেখ করে দিয়েছে বিটিআরসি। এর মধ্যে রয়েছে সব ধরনের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া। সব সেবা ও ট্যারিফ অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি।

বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারহান আলম গতকাল শনিবার (১৩ জুন) অপারেটরগুলোকে এই ই-মেইল পাঠান বলে জানা গেছে।

ই-মেইলে বিটিআরসি আরও বলেছে, বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর যে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, তা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

অবশ্য জাতীয় সংসদে যেদিন বাজেট ঘোষণা হয়, সেদিন থেকেই নতুন শুল্ক কার্যকর হয়। অর্থবিলের ৮৮ পাতায় কোন কোন দফা অবিলম্বে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় ৮০ নম্বর দফাও আছে। এই দফার অন্তর্ভুক্ত মোবাইল সেবা।

এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, সম্পূরক শুল্ক ও অন্যান্য শুল্ক আরোপ করা হলে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়। কারণ, তা না হলে অপব্যবহার করার সুযোগ থাকে। যেমন, বাজেটে গাড়ির ওপর যদি বাজেট ঘোষণাকালে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়, আর কার্যকর হয় জুলাই থেকে, তাহলে আগে গাড়ি আমদানি করে রাখার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ আরও বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক কার্যকর করার এই রীতি ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে। তবে আমরা মাঝে দুই বছর বাদ দিয়েছিলাম। পরে আবার আগের রীতিতে ফেরত যাওয়া হয়।’

বাজেটে সরকার মোবাইল সেবা, তথা কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার ও খুদে বার্তা পাঠানোর ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করে।

এর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন। রাতেই কোনো কোনো অপারেটর তা কার্যকর করার কথা জানায়। কেউ কেউ কার্যকর করলেও গ্রাহকের জন্য সব ক্ষেত্রে দাম বাড়ায়নি।

নতুন করহারে মোবাইল সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ১৫ শতাংশ, সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ ও সারচার্জ ১ শতাংশ। ফলে মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এর মানে হলো, প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে সরকারের কাছে কর হিসেবে যাবে ২৫ টাকার কিছু বেশি, এত দিন যা ২২ টাকার মতো ছিল। বিশ্লেষকেরা এবং কোম্পানিগুলো বলে আসছিল, মোবাইল সেবায় কর বাড়ানোর ফলে সাধারণ মানুষ চাপে বেশি পড়বে।

মোবাইল সেবার ওপর কর প্রায় প্রতিবছরই বাড়ে। এনবিআর ও মোবাইল অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোবাইল সেবার ওপর ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপ করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আরোপ হয় ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট ও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। আর চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পূরক শুল্ক আরও বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।

শীর্ষ দুই মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবির হিসাবে, তাদের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশই সরকারের কোষাগারে বিভিন্ন কর ও ফি বা মাশুল হিসেবে চলে যায়।

দেশে মার্চ শেষে মোবাইল গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫৩ লাখের বেশি। এ তালিকায় শীর্ষ ধনীরা যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন দরিদ্র মানুষ।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক বসানো ঠিক নয়। কারণ, এ ধরনের কর সাধারণ মানুষের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *