স্বদেশবাণী ডেস্ক: ঘোড়ারগাড়িতে ৫৮ বছরের কনের বাড়িতে বর সেজে হাজির হয়েছেন ৬৪ বছরের বর। বরিশাল নগরের দক্ষিণ আলেকান্দায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধার এমন বিয়ে নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার দুপুরে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহরে বিয়ে হয় তাদের। পরে ঘোড়ারগাড়িতে বর এসে তুলে নিয়ে যান কনেকে।
বরের নাম বজলু খান (৬৪) এবং কনের নাম বকুল বেগম ওরফে ফুলশুনী (৫৮)। বজলু খান জেলার উজিরপুরের কালিহাতা গ্রামের বাসিন্দা। গত ৩০ বছর আগে তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। ওই ঘরে ২ ছেলে এবং ১টি মেয়ে রয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় বিয়ে করে বরিশাল নগরের সাগরদী দরগাহ বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করে কাঠমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত বছর নগরীর ১ নম্বর সিএন্ডবি পোল এলাকায় ট্রাকচাপায় দ্বিতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি।
অপরদিকে নগরীর খান সড়ক এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দা ফুলশুনীর স্বামী মারা যান ১০ বছর আগে। একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকায় সে খোঁজখবর নেয় না। জীবিকার তাগিদে নগরের খান সড়ক এলাকায় মহাসড়কের পাশে বসে ডিম বিক্রি করেন তিনি।
জানা গেছে, স্থানীয়রা এই দুইজনের একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতা দেখে তাদের দুইজনের বিয়ের প্রাথমিক আলোচনা করেন। উভয়ে বিয়েতে সম্মতি দিলে দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়। এরপর চাঁদা তুলে প্রায় ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন স্থানীয় তরুণরা।
কনেকে বিয়ের পোশাক পরিয়ে পার্লারে নববধূর মতো সাজানো হয়। দুপুরে বরসহ ৫ জন বরযাত্রী বহনকারী ঘোড়ারগাড়ি আসে কনের অস্থায়ী নিবাস নগরীর খান সড়ক খালপাড় এলাকায়। সেখানে ৩০ হাজার টাকা দেনমোহরে তাদের বিয়ে হয় এবং স্থানীয় জনৈক আব্দুল মন্নানের বাসায় বরযাত্রীদের আপ্যায়ন করা হয়। আপ্যায়ন শেষে ঘোড়ারগাড়িতে কনে নিয়ে যান বৃদ্ধ বর বজলু খান।
এ বিয়ের অন্যতম উদ্যোক্তা মো. মাহাবুবুর রহমান মিলন এবং মো. ইমান আলী খান জানান, আর্থিক অনটনের কারণে তাদের মনে যেন আক্ষেপ না থাকে সেজন্য সোমবার বরের বাসায় বৌভাতেরও আয়োজন করা হয়েছে। বৌভাত শেষে কনেসহ বরকে কনের বাসায় নিয়ে আসা হবে। বিয়েতে খুশি নবদম্পতি। জীবনের সামনের দিনগুলো সুখে থাকার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মেহেদী পারভেজ খান আবীর জানান, জীবনে বাঁচার জন্য অবলম্বন দরকার। দুইজন নিঃসঙ্গ নারী-পুরুষের বিয়ের আয়োজন করে স্থানীয় যুবকরা একটি মহৎ কাজ করেছেন। তারা যাতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারেন সেই আশীর্বাদ করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর।