আসপিয়ার চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে মায়ের আকুতি

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও স্থায়ী ঠিকানার অভাবে আটকে যাওয়া চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আছপিয়া ইসলাম কাজল। একই সাথে তার ‘সরল ভুল’ উতরে উঠে চাকরিটি পাবেন বলে আশা বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানের।

তিনি জানিয়েছেন, মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যাচ্ছে। এরজন্য আমাকে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে। ওদিকে বরিশালের হিজলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শোকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আছপিয়া ইসলাম কাজলের পরিবার।

মেয়ের চাকরির জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসপিয়া মা ঝরনা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছি। তার চাকরি হয়েছে, কিন্তু আমার জায়গা-জমি না থাকায় চাকরিটি নাকি হবে না। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনজর চাই। যে করেই হোকে আমার মেয়েকে চাকরিটি দিন। আমি তো আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দেশের নাগরিক।’

চাকরি না হওয়ার হতাশায় আসপিয়া বলেন, ‘নিজের যোগ্যতায় প্রতিটি পরীক্ষায় পাস করেছি। অথচ জমি না থাকার কারনে আমার চাকরি হবে না কেন? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। আমিতো যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে সকল পরীক্ষায় পাস করেছি। তাহলে কেন আমার চাকরি হবে না? কাজল বলেন, প্রধানমন্ত্রী যোগ্য বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করছেন। সেখানে যোগ্য লোকের চাকরি জমি না থাকার কারনে হবে না এটি সঠিক বলে মনে করি না। আমার চাকরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

এদিকে আসপিয়া ইসলাম কাজলের চাকরি থেকে বাদ পরার বিষয়ে যথাযথ কর্মকর্তা তিনি নন বিধায় আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেননি রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান।
তিনি জানিয়েছেন, ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগকর্তা সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারগণ। তারপরও আসপিয়ার বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার সৃষ্টি করলে বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ডিআইজি নিজেও একটি স্ট্যাটাস দেন তার ফেসবুক প্রফাইলে।

ওই পোস্টে এসএম আক্তারুজ্জামান উল্লেখ করেছেন,‘মানবতা এবং বিধি-বিধানঃ আসফিয়া পুলিশে চাকুরি পেয়েও না পাওয়াঃ ডিআইজি’র কাছে আসা এবং জমি না থাকায় চাকুরি না পাওয়া রিপোর্ট- নিচের লিংকের পোষ্টটি দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে ফেসবুকে, অন-লাইন পোর্টালে। আসফিয়ার পক্ষে জোয়ার সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে যারা সরকারি চাকুরির বিধান সম্পর্কে সচেতন আছেন তারা তার পক্ষ নিতে পারছেন না। আসল ঘটনা হল, গতকাল (বুধবার) তারিখে সারাদিন সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বরিশাল পুলিশ লাইনে ব্যাস্ত ছিলাম। অনুমান আড়াইটার দিকে বরিশালের একজন সাংবাদিক আমাকে ফোন দেয়, জানায় আমার একটা সাক্ষাৎকার দরকার পুলিশের সুন্দর এনং স্বচ্ছ নিয়োগ সম্পর্কে। আমি তাকে প্রথম নিরুৎসাহিত করি। উনার আগ্রহে আমি উনাকে আসতে বলি। উনারা আধা ঘন্টা পর ক্যামেরা নিয়ে হন্ত-দন্ত হয়ে আমার সামনে উপিস্থিত হয়। আমি তাদের কাছে জানতে চাই বিষয়টা কি? উনারা পরে জানায় আসফিয়ার কথা। আমি তাদেরকে জানাই, আসফিয়ার নিয়োগকর্তা হলেন এসপি বরিশাল। আর তার পুলিশ ভেরিফিকেশন চলছে, এটা গোপনীয় প্রক্রিয়া। আসফিয়ার বা আমার তো এই বিষয়ে জানার কথা নয়। আসফিয়া জেনেছে তার চাকুরি হচ্ছেনা। কেন? সে জানায় তার জমি নাই তাই। তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারি, তার বাবা-মা উভয়ে ভোলা জেলার স্থায়ী বাসিন্দা। অনেক বছর আগে তার মা বরিশালের হিজলা থানা এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করেন। সে লেখাপড়া সেখানেই করেন, কিন্তু স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেননি। সে বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমান করতে পারছেন না। সে সরল ভুলে ভোলার পরিবর্তে বরিশালে চাকুরি প্রার্থী হয়েছে। তাকে শান্তনা দেই এবং সাংবাদিকদের কিছু পরামর্শ দেই। পুলিশ সুপার, বরিশাল এবং উপরে আসফিয়ার বিষয়টি অবগত করি। বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমার রেফারেন্সে পোষ্ট হয়, পোষ্টের মোমেন্টাম বাড়ানোর জন্য। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্ট বোধ থেকেই যায়। যারা তাকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায়, কাজে যদি মেয়েটি চাকুরি পায় তাতে আমি অনেক খুশি হব। আর এর জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিনত হবে। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি যেন ধরা দেয়।`

রেঞ্জের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিধি মোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। আমি বিধি মানি, কিন্তু মেয়েটির প্রতি আমার কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাকে নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায়, কাজে যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে আমি অনেক খুশি হব। আর এর জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে। দোয়া করি, মেয়েটির ভাগ্যে সোনার হরিণটি (চাকরি) যেন ধরা দেয়।

আছপিয়া ইসলাম কাজলের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা গেছে, তিনি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার বড় জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না গোবিন্দপুর গ্রামের মাতব্বর বাড়ির বাসিন্দা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মাতব্বর বাড়ির মেজবাহউদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে থাকেন স্বপরিবারে। তার পিতা মৃত শফিকুল ইসলাম ভোলা জেলার চরফ্যাসন নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ২৫/৩০ বছর আগে হিজলা উপজেলায় এসে বসবাস শুরু করেন। তিনি ব্যবসা করতেন।
বড় জালিয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ঝন্টু বেপারী বলেন, আছপিয়াকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। ওর বাবা সৎ মানুষ ছিলেন। কিন্তু ৫/৭ বছর আগে রাতে স্ট্রোক করে মারা যান। এরপরই ওই পরিবারটি অসহায় হয়ে পরে। আছপিয়ার এক চাচা ইঞ্জিনিয়ার। সম্ভবত দাদা বাড়ির সাথে ভালো সর্ম্পক নেই। তবে দাদা বাড়িতে ওরা বেশ জায়গা-জমি পাবে বলে জানিয়েছিলেন তার পিতা শফিকুল।

এই জনপ্রতিনিধি বলেন, শফিকুল আমার সাথে আলাপ করে হিজলায় জমি কিনে ঘর তুলবে বলে সব ঠিক করেছিল। এমনকি জমিও পছন্দ করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে মারা যাওয়ায় সব তছনছ হয়ে গেছে। ঝন্টু বেপারী বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও তাকে চাকরিটি দেওয়া উচিত। ওরাতো এই দেশেরই নাগরিক।

প্রসঙ্গত, পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আসপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া। ২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আসপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।

কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বুধবার হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আছপিয়াকে বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *