নারীদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন, পরে শ্লীলতাহানি

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বেকার, অল্পশিক্ষিত, দরিদ্র ও পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত নারীদের টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতো একটি প্রতিষ্ঠান। এমন অভিযোগে রাজধানীর খিলক্ষেতের বনরুপা আবাসিক এলাকায় রিয়েল ফোর্স সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমির হামজা ওরফে সিরাজীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১।

এসময় তার কাছ থেকে ৪টি ওয়াকিটকি সেট, ৩টি ওয়াকিটকি চার্জার, ১৬টি বিভিন্ন কালারের সিকিউরিটি গার্ড ইউনিফর্মের ব্যবহার্য প্যান্ট, ২টি ক্যাপ (রিয়েল ফোর্স), ১টি মেটাল ডিটেকটর, ১টি সিগন্যাল লাইট, ৬টি বেল্ট, ২টি মোবাইল ফোন, ৩ জোড়া বুট ও নগদ ৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

র‌্যাব জানায়, রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আসছিলো। আকর্ষণীয় অনলাইন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল একটি চক্র। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করে এবং সে অনুযায়ী মাসিক বিল কালেকশন করে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালে কোম্পানিটি লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং দেশের বড় একটি সুপারশপে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের বড় চুক্তির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। তারা মূলত সমাজের বেকার, অল্পশিক্ষিত, দরিদ্র পরিবারগুলোকে চাকরি প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১২ জুলাই) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খিলক্ষেতের বনরুপা আবাসিক এলাকায় রিয়েল ফোর্স সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিক সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমির হামজা ওরফে সিরাজীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল।

 

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, আমির হামজা ১৯৯৮ সালে ঢাকায় একটি সিকিউরিটি এজেন্সিতে চাকরি শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সিকিউরিটি কোম্পানি ও সুপারশপে বিভিন্ন পদে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন পদে চাকরি করে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০১৭ সালের শুরুতে রিয়েল ফোর্স নামে সিকিউরিটি কোম্পানির যাত্রা শুরু করে। এতে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ইউনুস মিয়া। তারা প্রথমে মূলত বিভিন্ন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করে এবং সে অনুযায়ী বকেয়া বিল কালেকশন করে।

২০২০ সালে কোম্পানিটি লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয় এবং একটি শোরুমে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের বড় চুক্তি করে। তাদের রিয়েল ফোর্সের মূল অফিস বারিধারা ডিওএইচএস। এছাড়াও রাজধানীর খিলক্ষেত ও চট্টগ্রামের হালিশহরে তাদের দুটি শাখা অফিস রয়েছে। তারা মূলত বিভিন্ন থার্ড পার্টির দালালের মাধ্যমে অনলাইনে লোক কালেকশন করে। প্রথমে চাকরি প্রত্যাশীরা দালালের সঙ্গে দেখা করে এবং তাদের ৪ হাজার টাকা জমা দিতে বলে। পরবর্তীতে দালালরা আমির হামজার সঙ্গে যোগযোগ করে তার বারিধারা অফিসে চাকরি প্রত্যাশীদের রিপোর্ট করতে বলে। এ পর্যায়ে ফরম ফিলাপ এবং ইউনিফর্ম বাবদ আরও ৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের সুপারভাইজার হিসেবে আট ঘণ্টা ডিউটি ও মাসিক ১৪ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের অফার দেওয়া হয়।

র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, চাকরিপ্রত্যাশীরা অনলাইনে কথাবার্তা বলার সময় কোনো ধরনের টাকা পয়সা লাগবে না বলে জানতে পারে। চাকরিপ্রত্যাশীরা অধিকাংশই অল্পশিক্ষিত, দরিদ্র, বেকার ও নিম্ন শ্রেণীর হওয়ায় অল্প টাকা নিয়ে ঢাকায় আসে এবং লোভনীয় চাকরির অফারে এ চক্রের খপ্পরে পড়ে। পরবর্তীতে চাকরিপ্রত্যাশীদের ১২ ঘণ্টা করে সিকিউরিটি গার্ডের ডিউটি করানো হলেও বেতন দেওয়া হয় না। এর প্রতিবাদ করলে ভিকটিমদের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো, প্রশাসনের ভয় দেখানো, জরিমানা ও ক্ষতিপূরণের ভয় দেখানোসহ অকথ্য গালিগালাজ করা হতো।

তিনি আরও বলেন, নারী চাকরিপ্রার্থীদের পারিবারিক কলহ ও পরিবার থেকে বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনলাইনে লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে তারা ঢাকায় চাকরির উদ্দেশ্য আসে। পরবর্তীতে যোগদানের পর এ চক্রের এমডি আমির হামজা নারীদের কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ প্রায়ই শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে থাকে বলে তারা অভিযোগ করে। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হয় তাদের অফিসে ডিউটি দেওয়া, বিয়ের প্রলোভন দেখানো এবং নিয়মিত বেতন দেন। যারা তার প্রস্তাবে রাজি হয় না সেসব নারীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, মানসিক নির্যাতন, জোর করে আটকে রাখা এবং তাদের দিয়ে অতিরিক্ত ডিউটি করানো হতো।

স্ব.বা/ রু

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *