“হেপাটাইটিস কতটা মারাত্মক? জানুন এর ৫ ধরন ও গুরুতর লক্ষণসমূহ”

জাতীয় লীড স্বাস্থ্য

স্বদেশবাণী ডেক্সঃ হেপাটাইটিস হলো লিভারের একটি প্রদাহ। দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। হেপাটাইটিসের ভাইরাস প্রাথমিক অবস্থায় শরীরে কোনো উপসর্গ প্রকাশ না করলেও ধীরে ধীরে মারাত্মক হয়ে ওঠে। যদিও এই রোগ ছোঁয়াচে নয়।

হেপাটাইটিস লিভারের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কময়ে দিতে শুরু করে। জানেন কি প্রতি বছর লিভারের এই রোগে বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

হেপাটাইটিস ভাইরাস দ্বারা লিভার কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করলেই কেবল নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন- শরীর দুর্বল, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা, শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করা ও হলুদ প্রস্রাবের মতো উপসর্গ ইত্যাদি। শরীরে এই রোগের বিস্তার ঘটলে পেটে পানি জমা, রক্ত পায়খানা ও রক্তবমি হতে পারে।

জেনে নিন হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ৫ ধরন ও লক্ষণসমূহ-
<
হেপাটাইটিসের ৫টি ভাইরাস হলো এ, বি, সি, ডি ও ই। এর মধ্যে টাইপ বি ও সি মারাত্মক রূপ নেয়। যা লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের মতো মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় তা এর চিকিৎসা করা না হলে সমস্যা আরও কগুরুতর হয়ে ওঠে। ফলে লিভার সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

>> হেপাটাইটিস এ দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের ক্ষেত্রে লিভার ফুলে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, জ্বর, বমি ও জয়েন্টে ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
<
>> হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের রক্ত, ঘাম, লালা, বীর্যসহ বিভিন্ন দেহনিঃসৃত তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত রক্তে অবস্থিত ভাইরাস ও এর বিরুদ্ধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি থেকে এ রোগ নির্ণয় করা হয়।

হেপাটাইটিস বি ভাইরাস লিভারে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এ কারণে রোগীর বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, কোলিক, ত্বকের হলুদ রঙের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ যা লিভার সিরোসিস ও ক্যানসারের রূপ নেয়। যদি কোনো গর্ভবতী নারী এতে আক্রান্ত হন; তবে তার গর্ভস্থ শিশুও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
>> হেপাটাইটিস সি বেশ জটিল ভাইরাস। এটি হেপাটাইটিস এ ও বি এর চেয়েও বেশি বিপজ্জনক। রক্ত দেওয়া-নেওয়া, শিরায় ইনজেকশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের সময় যদি জীবাণুযুক্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে হেপাটাইটিস সি এর সংক্রমণ ঘটে। পৃথিবী জুড়ে আনুমানিক ১৩০-১৭০ মিলিয়ন লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত।

হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ফলে লিভারের ক্ষত ও বেশ কয়েক বছর পর সিরোসিস সৃষ্টি করে।

আবার অনেক সময় সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার অকার্যকর, যকৃতের ক্যানসার, বা খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর শিরা ফুলে যেতে পারে। যার ফলে রক্তক্ষরণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ত্বকে চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

>> হেপাটাইটিস ডিতে বেশি আক্রান্ত হন হেপাটাইটিস বি ও সি এর রোগীরা। এটি দূষিত রক্তের সংক্রমণ, সংক্রামিত সূঁচ ব্যবহার বা শেভিংয়ের অন্যান্য কিটগুলির ব্যবহারের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। লিভারের সংক্রমণের ফলে বমি ও হালকা জ্বর হয়।

>> হেপাটাইটিস ই দূষিত খাবার দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ত্বকের হলুদ হওয়া ও হালকা জ্বর অনুভব করে। এ সংক্রমণের ফলে রোগী ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, ফ্যাকাশে ত্বক ও চেহারা ও জ্বরের মতো লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।

হেপাটাইটিসের বিভিন্ন ধরণ ও লক্ষণ যদি আপনার শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে মিলে যায়; তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।

আজ বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। এ বছরের হেপাটাইটিস দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘হেপাটাইটিস নির্মূলের এখনই সময়’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হেপাটাইটিসকে নির্মূল করার জন্য সব দেশকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।

স্ব. বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *