ড. কামালকে ইমাম বানিয়ে বিএনপির সব চিন্তাভাবনা ধূলিসাৎ: মোশাররফ

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক : গণফোরামের একাংশের প্রধান ড. কামাল হোসেনকে ইমাম মেনে বিএনপির সব চিন্তাভাবনা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘সরকার ইভিএমে নির্বাচন করতে চায় কেন?’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ইয়ূথ ফোরাম।

সভায় মোশাররফ বলেন, বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় দল গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে ইমাম বানিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে, তিনি বললেন নির্বাচনই করবেন না। এই ফ্রন্টে আমরা এত কষ্ট করে যে রূপরেখা বানালাম ড. কামাল হোসেনের নির্বাচন না করার কারণে ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা সেদিন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ফলে বিএনপির মতো একটি দলকে এই ফ্যাসিবাদ সরকার পাঁচ বা ছয়টি আসন দিয়ে বিদায় করে দেয়।

তিনি বলেন, সরকারবিরোধী অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। তাদের মতামত নিয়ে এটা সমৃদ্ধ করতে চাই। সেজন্য এখনো সেই রূপরেখা জনগণের সামনে আসেনি। আজও আমাদের মহাসচিব একটি দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। এই আলোচনা শেষে অবশ্যই দেশে একটা মঞ্চ করতে পারবো। যুগপৎ আন্দোলন করতে পারবো কি না, এর একটা সিদ্ধান্ত হবে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, আমরা বলেছি, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবো না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই সরকার ২০২৩ সালের নির্বাচন করে যেতে পারবে না। বর্তমান ফ্যাসিবাদ ও গায়ের জোরের সরকারের নির্বাচন কমিশন সংলাপের নামে নাটক করছে। আমরাসহ আরও কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এই সংলাপে অংশ নেইনি।

‘সংলাপে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিপরীতে মত দিয়েছে। আমরাও সেটা চাই না। সুতরাং বিষয়টির এখানেই মীমাংসা হওয়া উচিত। যে দেশের মানুষ নিজের হাতে ভোট দিতে পারে না, তারা কীভাবে মেশিনে ভোট দেবে? এই ব্যবস্থা তো বিশ্বে বাতিল করা হয়েছে। কারণ এটা মানুষের তৈরি। সুতরাং এটা দূরভিসন্ধিমূলক। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন।’

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি নাকি লোডশেডিংকে জাদুঘরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজ ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এখন তিনি বিএনপিকে হারিকেন দেওয়ার কথা বলছেন। আরে সেটা করতেও তো চার-পাঁচ কোটি হারিকেন কিনতে হবে। সেই টাকাও তো এখন তাদের নেই। আজ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সবক্ষেত্রে সংকট চলছে। শ্রীলঙ্কার মতো সংকট এখন বাংলাদেশেও। এটা তো বেশিদিন লুকিয়ে রাখা যায় না। সময় আসছে বাংলাদেশে সেই অবস্থা দেখবেন।’

‘এখন শুধু রাস্তায় মানুষের ঢল নামা বাকি। আমরা রাস্তায় সংকটের সমাধান করবো ইনশাআল্লাহ। সেই ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। ইয়াহিয়া খানের মতো শাসক টিকতে পারেনি। সুতরাং কারফিউ বা অন্য কোনোভাবেই ক্ষমতা রক্ষা করতে পারবেন না। রাস্তায় নামলে তদের পতন হবেই হবে।’

‘শ্রীলঙ্কায় দুই ভাই ১৮ বছর শাসন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। অতএব রাস্তায় নামার বিকল্প নেই। মানুষ দুরবস্থার মধ্যে আছে। তারা একটা পরিবর্তন চায়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছি। আমাদের রূপরেখা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। কীভাবে আন্দোলন হবে, সেই বিষয়ে ঘোষণা আসবে।’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ইভিএম কোনো কাজের জিনিস নয়। বিগত দুই নির্বাচনে তারা ডাকাতি করেছে। সরকার এবার দিনের ভোট আগের রাতে ডাকাতি করতে পারবে না। তারা তো ক্ষমতা ছাড়তে পারছে না। কারণ তারা বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে। তারা প্রশাসনকে গিলে ফেলেছে। এখন তারা পীড়া দিচ্ছে। লড়াই ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বিশ্বের বহু দেশ ইভিএম বাদ দিয়েছে। ইভিএমের জারিজুরি চলবে না। কিন্তু সরকার তো সে পথেই যাচ্ছে। সেজন্য লড়াইয়ে যেতে হবে। এই আন্দোলন বিএনপি ছাড়া সম্ভব নয়। এই জালিম সরকারের চোখে কোনো চামড়া নেই। তারা লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে নিপীড়ন করেছে। বহুদিন ধরে তারা আন্দোলন করছে। এখন জীবনও দিচ্ছে।

‘আমাদের নিজেদের ভুলেও কিন্তু ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী হয়েছে। আজ আওয়ামী লীগকে মানুষ থুথু দিচ্ছে। কোনো মানুষ তাদের দেখতে পারে না। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে, তারা টিকতে পারবে না। পুলিশ ছাড়া টিকতে পারবে না। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজপথ দখল হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ বাহ্যিকভাবে আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংকসহ বিদেশিদের পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু তলে তলে তাদের পা ধরছে। আমাদের টার্গেট অটুট রাখতে হবে যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। তাহলে তারা ইভিএমের স্বপ্নও দেখতে পারবে না।’

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার ফের ইভিএম ব্যবহার করে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এবার সেই খায়েশ তাদের পূরণ হবে না। অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সভাপতি মুহাম্মদ সাইদুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিলকিস ইসলাম, আনোয়ার হোসেন বুলু, শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা মো. শুকুর মাহমুদ ববি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব ও সহ-সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগ।

স্ব.ব/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *