স্বদেশ বাণী ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে দুর্লভপুর ইউনিয়নের নামো জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দারা পদ্মা পাড়ের ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
কৃষিকাজ, রাজমিস্ত্রি আর হরেক মালের ব্যবসা-এসব করে পেটের ক্ষুধা মেটাতে দু’মুঠো অন্নের সংস্থান করতে হচ্ছে তাদের। ভিটামাটি আর আবাদি জমি হারিয়ে সারা বছরই আর্থিক অভাব অনটনে বেড়ে উঠছে পদ্মা পাড়ের শিশুরা।
প্রবীণদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ১৫ বছর পূর্বে পদ্মা নদীর ওপারে ৪টি গ্রাম ছিলো। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ওই ৪ গ্রামের মানুষ এখন ছন্নছাড়া জীবনে। যেখানে সেখানে ঘর তুলে ঠাঁই নিয়েছেন তারা। ১৫ বছরে দুর্লভপুর ইউনিয়নে ৯শ বিঘারও বেশি আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
পদ্মাপাড়ের নামো জগন্নাথপুরের আব্দুল আউয়াল। সংসারে অভাব অনটন থাকায় প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডিও পেরোতে পারেননি। কোন রকমে ৪র্থ শ্রেণি পাশ করেছেন। সংসারের অভাব কাটাতে তার বাবার সাথেই পরের জমিতে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন। দিন গড়ানোর সাথে সাথে পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে প্রথম দিকে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসাবে কাজে যোগ দেন। কাজের অভিজ্ঞতা বেড়ে তিনি এখন পেশাদার রাজমিস্ত্রি।
আউয়াল বলেন, ‘বাপ-দাদাদের জমি কম ছিলোনা। নিজের জমিতে যা ফসল ফলতো, তা দিয়েই দিব্বি সংসার চলে যেতো। সব জায়গা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিজেদের ভিটামাটি হারিয়ে অন্যের জায়গায় ঠাঁই নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসারের চালাতে হয়।’
পদ্মা পাড়ের লালচান। দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্যানে হরেক মালের ব্যবস্যা করেন। তাদেরও ভিটামাটি পদ্মায় নেমে গেছে। তিনি বলেন, ‘বছরে ৭ মাসই বাইরে থাকি। সেখানে ভ্যানে হরেক মাল বিক্রি যা আয় হয়। তা দিয়েই বাড়ির কাজে লাগাই।’
অনেকে বিভিন্ন ব্যাংক কিংবা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান দিয়েছেন। তাদের একজন সেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমাদেরও দালান ঘর ছিল। নদীতে নেমে গেছে। পরে এলাকায় কৃষি কাজ করতাম। কিন্তু সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। স্থানীয় এনজিও থেকে লোন নিয়ে ছোটখাটো মুগরির দোকান দিয়েছি। এ থেকেই সংসার চলছে।’
নামো জগন্নাথপুরের গ্রামপুলিশ শ্রী জনর্দান বলেন, ‘এলাকার অধিকাংশ মানুষ নদী ভাঙনের কবলে পড়ে দিশেহারা। কেউ এ দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, আর কেউই পারেনি। নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, হরেক মালের ব্যবসা করেন।’
নামো জগন্নাথপুরের মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘পদ্মা পাড়ের এলাকা নামো জগন্নাথপুর। এ এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষের বসবাস। এরমধ্যে সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে এখানকান মানুষ বছরের পর বছর নিঃস্ব হচ্ছে।’
দুর্লভপুরের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব বলেন, ‘নদী ভাঙনে কবলিত মানুষের তালিকা করা হচ্ছে। সরকারি অনুদান পেলে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
স্ব.বা/রু