রাজশাহীতে মায়ের আত্মহত্যা, অভিযোগ পুলিশ বাবার বিরুদ্ধে

লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে  মায়ের আত্মহত্যায় বাবাকে দোষারোপ করে পোস্ট করেছেন ছেলে।

তাঁর বাবার অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ও দীর্ঘদিন ধরে চালানো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে তাঁর মা আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছেলে নাফিজ ইসলাম। এ ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশ মামলা না নিয়ে ঘোরাচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নুরুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী মহানগরের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার। গত ৩০ মে বিকেলে নুরুল ইসলামের পদ্মা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে তাঁর স্ত্রী নাজমা ইসলামের (৫৭) ঝুলন্ত লাশ সিলিং ফ্যান থেকে নামান ভবনের লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নগরের চন্দ্রিমা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

ঘটনার তিন মাসের বেশি সময় পর এই দম্পতির ছেলে নাফিজ ইসলাম সোমবার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি দেন। এতে তিনি মায়ের হাতে লেখা সুইসাইড নোট ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ছবিও জুড়ে দিয়েছেন।

নাফিজ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চূড়ান্ত বর্ষে পড়ছেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা-বাবার সম্পর্ক কখনোই ভালো ছিল না। ছোটখাটো বিষয়ে মায়ের ওপর টর্চার করতেন বাবা। আমার মা সব সহ্য করেই ৩৫-৩৬ বছর সংসার করে গেছেন দুই ছেলে-মেয়ের কথা চিন্তা করে। অবসরের পর শুরু হয় বাবার এক্সট্রা ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার আর মায়ের প্রতি অমানুষিক হিংস্রতা।’

শুরু থেকেই পুলিশ অসহযোগিতা করে আসছে দাবি করে নাফিজ ইসলাম লেখেন, ‘৩০ মে ক্লাসে থাকাকালে ফোনে আমি জানতে পারি, আমার মা আর বেঁচে নেই। নিজেকে সামলে দ্রুত রাজশাহীতে আসি। আমার আসার আগেই রাজশাহী চন্দ্রিমা থানার পুলিশ উপস্থিত হয় বাসায়। চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ এমরান হোসেন এরপর শুরু করলেন আরেক খেলা।

আমার মায়ের শরীরের আঘাতের চিহ্নগুলো মৃত্যুর পর শুইয়ে রাখার জন্য হয়েছে, এ রকম বলতে থাকেন। পুলিশের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টেও সে রকমই লেখা হলো। রাত আটটার দিকে মাকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হলো। এরপর মায়ের লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পাই আমার মায়ের ড্রয়ারে, যেখানে মা স্পষ্ট লিখে গেছেন, তাঁর সঙ্গে কী কী করা হয়েছিল। রাতেই থানায় যোগাযোগ করি অভিযোগের জন্য। ওসি এমরান হোসেন নোট দেখে বলেন, ‘‘এসব অভিযোগ লাগবে না, অপমৃত্যু মামলার তদন্তেই সব বেরিয়ে আসবে।’’

নাফিজের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবা প্রভাব খাটিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিচ্ছেন অভিযোগ করে নাফিজ আরও লিখেছেন, ‘আমার মায়ের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এক মাস পর পাওয়া গেল। প্রতিবেদনে মায়ের শরীরে মারধরের চিহ্ন স্পষ্ট। এরপর থানা থেকে আমাকে বলা হয়, পুলিশ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পায়নি।

এদিকে, আমার বাবা ফোনে আমাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। রাজশাহীতে গেলে আমাকে কেটে ফেলবেন। পরে আমার মা মারা যাওয়ার তিন মাস পর থানা-পুলিশ স্বীকার করল, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।’

জানতে চাইলে নাফিজ ইসলামের বোন তাবাসুম ফারজানা বলেন, তাঁর ভাই ফেসবুকে যা লিখেছেন, এর পুরোটাই সত্য। তাঁরা মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবার প্রভাবের কারণে মামলা করতে পারেননি। তাঁরা এ ঘটনায় বিচার চান।

আর নাফিজ ইসলাম বলেন, তাঁর মায়ের সঙ্গে যা যা ঘটেছে, তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি এ ঘটনায় মামলা করতে চান। শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে চান।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

চন্দ্রিমা থানার ওসি (তদন্ত) মাইনুল বাশার বলেন, ওসি বর্তমানে একটি প্রশিক্ষণে আছেন। এটা নিয়ে তিনি রাজপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) সোহেল রানাকে কল করার পরামর্শ দেন।

এসি সোহেল রানা মুঠোফোনে বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট’ কিছুটা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে নাফিজের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে। একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলেই সেটি অন্য মামলায় রূপান্তরিত হবে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *