বিদ্যুৎ বাণিজ্যে ভারতের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ-নেপাল

আন্তর্জাতিক লীড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ বাণিজ্য সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়ে ভারতকে অবহিত করেছে নেপাল। এ জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের বিষয়ে সামনে এগিয়ে যেতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছে কাঠমান্ডু। নেপালের জ্বালানি, পানিসম্পদ ও সেচ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে রোববার (১৬ অক্টোবর) নেপালি সংবাদমাধ্যম দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট এ তথ্য জানিয়েছে।

আগস্টের শুরুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে নেপাল ইলেকট্রিক অথোরিটি ও বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেডকে (এনভিভিএন) অনুরোধ করতে রাজি হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে সক্ষম হবে নেপাল।

গত ১০ আগস্ট অনুষ্ঠিত যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপ ও সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, বাংলাদেশের ট্রান্সমিশন লাইন সিস্টেম ভেড়ামারা হাই ভোল্টেজ ডাইরেক্ট কারেন্টের মাধ্যমে নেপাল থেকে ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা যেতে পারে বলে উভয় পক্ষ একমত হয়।

উভয় পক্ষ ভারতীয় ভূখন্ড ব্যবহার করে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ডেডিকেটেড ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের জন্য নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতেও সম্মত হয়।

নেপালের জ্বালানি সচিব সুশীল চন্দ্র তিওয়ারি বলেছেন, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে সিদ্ধান্তের বিষয়ে নেপাল ভারতীয় পক্ষকে জানিয়েছে। নেপাল ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি-বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রæপ ও জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির পরবর্তী বৈঠক চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বৈঠকের সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ (এনইএ) তিন দেশের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আলোচনার বিষয়ে এনভিভিএন-কে চিঠি দিয়েছে।

এনইএ এর পাওয়ার ট্রেড ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর প্রবাল অধিকারী বলেছেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার ইউটিলিটি নেপাল-বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগস্টের শেষের দিকে এনভিভিএনের কাছে একটি অনুরোধ করেছে। এজন্য ভারতীয় সংস্থাটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।

এনভিভিএন হলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ভারত সরকারের একটি নোডাল সংস্থা। প্রবাল অধিকারী বলেছেন, আমরা ভারতীয় কোম্পানির কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাইনি।

নেপাল ও বাংলাদেশ বহরমপুর-ভেড়ামারা আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বাণিজ্য করার পরিকল্পনা করছে। ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্তকারী এই ট্রান্সমিশন লাইনটি ২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং লাইনটিতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিনিময়ের সুবিধা রয়েছে।

মূলত নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সীমান্ত নেই। তাই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নেপালের কর্মকর্তারা বলছেন, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ বাণিজ্যের জন্য ভারতকে সঙ্গে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অপরিহার্য। প্রবাল অধিকারী বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়নি তবে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে নেপাল ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় এই বিষয়টি আলাচিত হয়ে আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নেপালের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিষয়টি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উত্থাপন করা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী ভারতে সফর করেছেন। সে সময় তিনি ইস্যুটি নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *