তানোরে সিন্ডিকেটে পানির দামে গির্জার চাল বিক্রি! হতাশ

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ও কলমা ইউনিয়ন(ইউপির) গীর্জার জিআর চালের সিন্ডিকেটে জোরপূর্বক পানির দামে ডিও কিনছেন মিন্টু বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে পরিষদ চত্বরে ঘটেছে ডিও কেনার ঘটনাটি। এমনকি গীর্জার সভাপতি সম্পাদক পানির দামে বিক্রি করতে না চাইলে নানা ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। মিন্টু কামারগাঁ ইউপি আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। শুধু গীর্জার এচাল না কলমা কামারগা ইউপির যত ধরনের বরাদ্দ সব বরাদ্দের চাল তাকে ছাড়া অন্যত্র বিক্রি করতে পারেন না কেউ। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে মিন্টু ২০০৮ সাল থেকে অদ্যবদি সিন্ডিকেট করে লাখপতি বনে গেছেন। এতে করে সরকার খাদ্য সংকটের মাঝেও সরকারের মহত কাজকে ভেস্তে দিয়েছেন চক্র মিন্টু। ফলে সিন্ডিকেট মিন্টুর লাগাম টানতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, চলতি মাসের ২৫ ডিসেম্বর রোববার খ্রিষ্টীয় ধর্মালম্বীদের বড় দিনের উৎসবের জন্য সরকার গীর্জাপ্রতি ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেন। যার ডিও বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে হয়েছে। উপজেলার কলমা ও কামারগাঁ ইউপিতে ৩১ টি গীর্জায় ৫০০ কেজি করে মোট ১৫ হাজার ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ হয়।

বেশকিছু গীর্জার সভাপতি সম্পাদকরা জানান, মিন্টু ৩৩ টাকা কেজি করে ডিও কিনছেন। অথচ বাজারে নিম্মে হলেও ৪৫ টাকা কেজির নিচে চাল পাওয়া যাবে না। গতবারে কম দামের কারনে ডিও না দেওয়ায় কামারগাঁ গুদাম থেকে মিন্টুর হুকুমে একেবারে নিম্মমানের চাল দেয়, যা বিক্রি করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তার কাছে বিক্রি না করলে গুদাম থেকে চাল বের করা যাবে না। তিনি গুদামের মুল সিন্ডিকেট। এজন্যই তো বৃহস্পতিবারে ডিও দিচ্ছে, যাতে আমরা বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুরের কাছে বসে আছে সিন্ডিকেট চক্র মিন্টু। অফিস থেকে ডিও পাওয়া মাত্রই মিন্টু ডিও কিনে নিচ্ছেন। কেউ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। যার কারনে সরল সোজা খ্রিষ্টীয় ধর্মের লোকজনরা ভয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সুত্রে জানা যায়, সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪২ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। মিন্টু ডিও কেনে কোন মিলারের নামে সেই চাল সংগ্রহ দেখাবে। শুধু ডিও কিনে কেজি প্রতি ৯ টাকা করে লাভ করবেন। কোনভাবেই এসব চাল বের হবেনা। এজন্যই বৃহস্পতিবার ডিও দেওয়া হয়েছে। কারন শুক্রবার শনিবার ও বড় দিনের জন্য রোববারও ছুটি। তবে সবার কাছে ৩৩ টাকা কেজি দিচ্ছে না মিন্টু, ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ – ২৮ টাকা কেজি করেও কিনছেন। মিন্টুর প্যান্টের পকেট ভর্তি ডিও দেখা গেছে।

মিন্টু জানান, আমার সিন্ডিকেট করে কিনার ক্ষমতা আছে, কিনছি, কারো ক্ষমতা থাকলে কিনা বন্ধ করবে। আমার কথায় কামারগাঁ গুদাম চলবে, যত দিন আওয়ামীলীগ সরকার বা এমপি ফারুক চৌধূরী আছে ততদিন এভাবেই সিন্ডিকেট করা হবে। দল ক্ষমতায় এমপি দলের আমি সিন্ডিকেট করবনা তো কে করবে বলে দম্ভক্তি প্রকাশ করেন।

কামারগাঁ ইউপির বেশকিছু আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, মিন্টু কামারগাঁ খাদ্যগুদামের গড ফাদার। তার বিপরীতে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে থাকত ইউপির সাবেক বিএনপি সভাপতি কামারগাঁ বাজারের বড় ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জুয়েলসহ তার ভায়েরা। জুয়েলকে হাতে রাখতে মিন্টু নামমাত্র দলে নিয়ে আসে, এখন জুয়েল ও মিন্টু মিলেমিশে চলছে রমরমা সিন্ডিকেট। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মিন্টু বিএনপি নেতার সাথে আতাত করে সিন্ডিকেট করছেন। মিন্টুও ১৫ টাকা কেজির চালের ডিলার, নতুন ভাবে জুয়েলকেও নিয়ে দিয়েছেন। মিন্টু যে সব ডিও কিনেছে, তা জুয়েলের নামে সংগ্রহ দেখাবে।
গুদাম কর্মকর্তা রেজাউল জানান, কে ডিও কিনেছে সেটা আমি দেখব না, যার নামে ডিও সে না আসলে কোনভাবেই চাল দেওয়া হবে না।
খাদ্য কর্মকর্তা আজহার উদ্দিন জানান, ডিও কেনাবেচার সুযোগ নেই, আমি গুদাম কর্মকর্তা দের নির্দেশ দিয়েছি যার নামে ডিও, তার নামে চাল বের হবে। বের হওয়ার পর কেনাবেচা করলে সেটা তাদের ব্যাপার। আপনার দপ্তরের সামনে মিন্টু কামারগাঁ ও কলমার যত গীর্জা আছে সবগুলোর চাল ৩০-৩২-৩৩ টাকা দরে কিনছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এখানে কেনার সুযোগ নেই বলে এড়িয়ে যান।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *