উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা শুরু, ৫টিতেই ছাড় চায় জাপা

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বিএনপির এমপিদের পদত্যাগে শূন্য হওয়া পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি (জাপা)। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় এসব আসনের উপনির্বাচনে কৌশলী সমঝোতার লক্ষ্যে দল দুটির মধ্যে অনানুষ্ঠানিক কথা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কাছে পাঁচটি আসনেই ছাড় চায় জাপা। তবে আওয়ামী লীগ এবিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, উপনির্বাচনে মনোনয়নের শেষ দিন আগামী ৫ জানুয়ারি।

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল রবিবার ইত্তেফাককে বলেন, ‘উপনির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছু কথাবার্তা হয়েছে, আরো হবে। প্রাথমিক আলোচনায় দুটি ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি। প্রথমটি হলো—প্রত্যেকটি আসন উন্মুক্ত রাখা হতে পারে; তাতে আওয়ামী লীগ ও জাপাসহ যে কোনো দলের মনোনীত প্রার্থী অংশ নিতে পারেন। দ্বিতীয়টি হচ্ছে—সংসদে বিরোধীদলের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন নাও দিতে পারে; সেক্ষেত্রে জাপার প্রার্থীসহ প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য যে কেউ জয়ী হতে পারেন।’

তবে পাঁচটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের আগামী বুধবার থেকে ৩১ ডিসেম্বর শনিবার পর্যন্ত মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বলেছে আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের সঙ্গে গতকাল তার গুলশানের বাসায় বৈঠক করেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। বৈঠকে আসন্ন উপনির্বাচন, আগামী ১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং দলে চলমান বিবাদ নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের বিষয়ে জাপা মহাসচিব চুন্নু ইত্তেফাককে বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমরা তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ১ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত আলোচনাসভায় রওশন এরশাদ উপস্থিত থাকবেন।’

দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে গত ১ নভেম্বর থেকে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকা জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনাসভায় উপস্থিত থাকবেন। এর ফলে, ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর দলীয় কোনো অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো একমঞ্চে উপস্থিত থাকছেন রওশন ও জি এম কাদের। এর মধ্যে অবশ্য থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিত্সা শেষে গত ২৭ নভেম্বর রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর তার সঙ্গে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে গিয়ে বৈঠক করেছেন জি এম কাদের। এরপর রওশনের সঙ্গে গণভবনে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। চুন্নু জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জি এম কাদের উপস্থিত থাকলেও আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি হয়তো ঐ দিন বক্তব্য রাখবেন না। উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা বাতিল চেয়ে জি এম কাদেরের করা আবেদনের ওপর আগামী ৯ জানুয়ারি আদালতে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

উপনির্বাচন নিয়ে রওশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘রওশন এরশাদ বলেছেন, দলের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী মনোনয়ন দেবে দল। সেখানে তার কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না।’ চুন্নু বলেন, তবে পাঁচটি আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণের পর রওশন এরশাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই জি এম কাদেরসহ জাপার মনোনয়ন বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। উল্লেখ্য, পাঁচটি আসনে জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আজ সোমবার সাক্ষাত্কার নেবে দলের মনোনয়ন বোর্ড।

উপনির্বাচনে রওশন নির্দিষ্ট কাউকে প্রার্থী করার প্রস্তাব করেছেন কি-না, জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, ‘না, উনি এমন কিছু বলেননি। আমরা নিজ থেকেই বলেছি, দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার সঙ্গে পরামর্শক্রমেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’

প্রসঙ্গত, চলতি একাদশ সংসদে বিএনপি দলীয় মোট সাত জন সদস্যের মধ্যে ছয় জন গত ১১ ডিসেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। তারা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া-৬ আসনের জি এম সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত আসনের ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তাদের ছয় জনেরই পদত্যাগপত্র গৃহীত হয় এবং ১১ ডিসেম্বর রাতেই আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদ সচিবালয়।

ইসি জানিয়েছে, পাঁচটি আসনে উপনির্বাচনের পর শূন্য হওয়া সংরক্ষিত আসনের তপশিল ঘোষণা করা হবে। বিএনপি দলীয় অপর সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ গত ২২ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেছেন। তার আসনটিও শূন্য ঘোষণা করে ইতিমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সংসদ সচিবালয়। এই আসনটিতে উপনির্বাচনের জন্য নতুন করে তপশিল ঘোষণা করবে ইসি।

রওশনপন্থিদের কারো কারো মতে, ‘নিজের পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই এবং উপনির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না’—জি এম কাদের ও চুন্নুর সঙ্গে বৈঠকে এমন কথা বললেও নানা কারণে শেষদিকে বেঁকে বসতে পারেন রওশন এরশাদ। সেক্ষেত্রে, শূন্য আসনগুলোর উপনির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। রওশনপন্থিদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জিয়াউল হক মৃধা, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজউদ্দিন আহমেদ, বগুড়া-৬ আসনে নুরুল ইসলাম এবং কাজী মামুনুর রশীদকে কোনো একটি আসনে প্রার্থী করার কথা জোরালো আলোচনায় রয়েছে রওশনপন্থিদের মধ্যে।

এর মধ্যে, জাপা থেকে বহিষ্কৃত জিয়াউল হক মৃধা ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাবেক এমপি। মৃধার করা মামলাতেই জি এম কাদেরের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ইত্তেফাককে বলেন, ‘উনি (মৃধা) তো দলের প্রাথমিক সদস্যও নন। উনি কীভাবে মনোনয়ন পাবেন!’

রওশনপন্থিদের কেউ কেউ জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে উপনির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে প্রার্থী করার পক্ষে। কাজী মামুন ইত্তেফাককে বলেন, ‘আসনটি মৃধা সাহেবের। কাজেই সেখানে আমার মনোনয়ন চাওয়াটা অযৌক্তিক।’ কাজী মামুনও বর্তমানে জাপার কেউ নন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে জি এম কাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়ারি (জিডি) করা হয়। এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালেও মামলা করেছেন জি এম কাদেরের ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট আবু তৈয়ব। এছাড়া, রওশনকে কেন্দ্র করে জাপায় বিবাদ সৃষ্টির মূল ভূমিকায়ও রয়েছেন কাজী মামুন ও মৃধা। এনিয়ে তাদের দুজনের বিষয়ে জাপার নেতাকর্মীদের ঘোর আপত্তি রয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপা মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি জিয়াউল হক মৃধার জামাতা। সে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এনিয়ে তখন মৃধা ও রেজাউলের সমর্থকরা পালটাপালটি বিক্ষোভও করেন। পরে নির্বাচনে সেখানে জয়ী হন বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার। জানা গেছে, এবারও এই আসনে মৃধা ও রেজাউলকে নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদের বলয়ের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *