মেট্রোরেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য যেসব সুবিধা থাকছে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বছর শেষে বাংলাদেশের অহংকারের পালকে যুক্ত হলো আরও একটি মুকুট। স্বাধীনতার ৫১তম বছরে দেশ প্রথমবারের প্রবেশ করলো মেট্রোরেলের যুগে। ঢাকা মহানগরীর যানজট নিরসনে ও পরিবেশ উন্নয়নে দ্রুতগামী অত্যাধুনিক এ গণপরিবহন ব্যবস্থা রাজধানীবাসীর জনজীবনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।

বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই মেট্রোরেলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জন্য থাকছে যাতাযাত সুবিধা। উদ্বোধনী দিনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজনকে হুইল চেয়ার নিয়ে মেট্রোরেলে উঠেছেন।

আগামীকাল (২৯ ডিসম্বর) থেকে জনসাধারণ দিনে চার ঘণ্টা (সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত) মেট্রোরেলের সুবিধা পাবে। শুরুতে চলাচল সীমিত রাখলেও ধীরে ধীরে চলাচলের সময় বাড়ানো হবে। ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী ২৬ মার্চ থেকে উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পুরোদমে চালু হবে মেট্রোরেল। এই পথের দৈর্ঘ্য ১১.৭৩ কিলোমিটার এবং মোট স্টেশন রয়েছে ৯টি। এই পথের সর্বোচ্চ ভাড়া ৬০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য যা থাকছে
এমআরটি লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রো রেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য রেল এবং স্টেশনে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী ও খর্বকায় ব্যক্তিরা যাতে টিকিট অফিস মেশিন (টিওএম) থেকে সহজে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সেজন্য অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতায় টিকিট বুথ রাখা হয়েছে। একইভাবে হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা টিকিটি ভেন্ডিং মেশিন (টিভিএম) ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজের টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

এছাড়া হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীরা পেইড জোনে সহজে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য হুইল চেয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয় ভাড়া পরিশোধের প্রশস্ত গেট করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের লিফটে সহজে ওঠা-নামার সুবিধার্থে লিফটের ভেতরে ধরার হাতল, নিম্ন উচ্চতায় কন্ট্রোল প্যানেল ও নিজের অবস্থান বোঝার জন্য আয়না রাখা আছে। লিফটের কন্ট্রোল প্যানেলে ব্রেইল পদ্ধতিতে নির্দেশনাও রাখা আছে। হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যে স্টেশনে ওঠা-নামার জন্য লিফটের সামনে ঢালু পথ (র‌্যাম্প) বানানো হয়েছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য কনকোর্স এলাকায় বিশেষ সুবিধা সম্বলিত ও সজ্জিত ওয়াশ রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে বাকপ্রতিবন্ধী ও বধির যাত্রীরা ডিজিটাল নির্দেশিকা অনুসরণ করে স্বাচ্ছন্দ্যে মেট্রো স্টেশনে ও মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। অন্ধ যাত্রীদের মেট্রো স্টেশনে চলাচলের জন্য ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে হলুদ রঙয়ের ট্যাকটাইল পথের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। টয়লেট, লিফট ও অগ্রাধিকার আসন সহজে বোঝার জন্য প্ল্যাটফর্ম ও মেট্রো ট্রেনে শনাক্তকারী চিহ্ন আছে।

স্টেশন এলাকায় এবং মেট্রো ট্রেনের অভ্যন্তরে অডিও ও ভিজুয়াল ইনফরমেশন সিস্টেম রয়েছে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অন্যান্য যাত্রীদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীরাও শোনা ও দেখার মাধ্যমে সহজে মেট্রো ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন। যাত্রীদের পদস্থলনজনিত দুর্ঘটনা রোধ, হুইল চেয়ার ও ব্লাইন্ড স্টিক ব্যবহারের সুবিধার্থে মেট্রো ট্রেনের কোচের ফ্লোর এবং স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের উপরিভাগ একই সমতলে রাখার জন্য মেট্রো কোচের নিচে অত্যাধুনিক এয়ার ব্যাগ সাসপেনশন সংযোজন করা হয়েছে। মেট্রো কোচের বহির্ভাগ এবং প্ল্যাটফর্মের মধ্যে সর্বত্র এমনভাবে ফাঁকা রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে যাত্রীরা নিরাপদে ও সহজে মেট্রো ট্রেনে ওঠা-নামা করতে পারেন।

মেট্রোরেলে নারী যাত্রীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য যা থাকছে
যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি ট্রেনে একটি করে কোচ শুধুমাত্র নারী যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এতে প্রতি ট্রেনে প্রতিবার সর্বোচ্চ ৩৯০ জন নারী যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। নারী যাত্রীরা ইচ্ছা করলে অন্য কোচেও যাতায়াত করতে পারবেন। মেট্রো স্টেশনগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা বাথরুম রয়েছে এবং তাতে শিশুদের ডায়াপার পরিবর্তনের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা সংযোজিত আছে। গর্ভবতী নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য মেট্রো ট্রেনের কোচের অভ্যন্তরে আসন সংরক্ষিত রাখা আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নারীদের জন্য পৃথক একটি কোচ নির্ধারণ করে রেখেছি। আমাদের নারীরা বাসে উঠতে পারে না, সেখানে তাদের নানা ধরনের অসুবিধার কথা শুনি, এজন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। যে কোন শারীরিক অক্ষমতা থাকুক না কেন, সবাই যেন মেট্রোরেলে চলতে পারে আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের মেট্রোরেলে যেমন, আমাদের এখানেও ঠিক তেমনই রাখা হয়েছে।
স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *