অনিয়ম দুর্নীতিতে ভরা তানোরের হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়   

রাজশাহী শিক্ষা
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপি)’র হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্কুলের প্রায় ২২ বিঘা তিন ফসলী জমি টেন্ডার দিয়ে সেই টাকা স্কুলের উন্নয়নে ব্যবহার না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নহির উদ্দিন ও সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানের বিরুদ্ধে। এমনকি স্কুলের নামে থাকা ২২বিঘা ফসলী জমি এক সিজিনের জন্য চলতি মাসের (১০জুন) শনিবার প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিয়ে টেন্ডার দেয়া হলেও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১লাখ ৬০হাজার টাকা দিয়ে টেন্ডার দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
জানা গেছে, হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয় টি স্থাপিত হয় ১৯৪৭সালে। স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে স্কুলের নামে রয়েছে প্রায় ২২বিঘা নিজস্ব কৃষি জমি।যা প্রতি বছর টেন্ডার দিয়ে স্কুলের আয় আসে প্রায় ৫লাখ টাকা। সেই আয়ের টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়ন মূলক কাজ করার কথা থাকলেও কোন কাজ না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ সদস্যরা।
এতে করে টেন্ডারে বছরে ৫লাখ করে টাকা আসলে স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হিসেবে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা স্কুলের আয় হচ্ছে। যা দিয়ে ৫তলার একটি পাকা স্কুল তৈরি করা যেতো। অথচ স্কুল স্থাপিত হওয়ার ৭৬ বছর পার হলেও স্কুলের চুল পরিমান কোন উন্নয়ন হয়নি। বরং স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পুরাতন মাটির ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই দিকে কোন নজর নেই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির। তবে স্কুলের উন্নয়ন না হলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির উন্নয়নের কোন কমতি নেই। অন্যদিকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খান আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না অভিভাবক সহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
যার ফলে বছরের পর বছর স্কুলের জায়গা জমি টেন্ডার দিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। এদিকে স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে তার কোন সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা না করে প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন অভিভাবক সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। হরিপুর গ্রামের বেশকিছু স্থানীয় বাসিন্দারা জানান,স্কুলটি স্থাপিত হওয়ার সময় এলাকাবাসী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা হয়ে স্কুলের নামে কৃষি জমি গুলো দান করেন। যাতে করে সেই টাকা দিয়ে স্কুলের উন্নয়ন মূলক কাজ করা যায়। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া ভালো ভাবে করানো হয়। কিন্তু স্কুল স্থাপিত হওয়া ৭৬ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, স্কুলের জমি টেন্ডার দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করা হচ্ছে,তবুও নেই কোন স্কুলের উন্নয়ন।
স্কুলের আয়ের টাকা দিয়ে পাকা স্কুল ভবন নির্মাণ করার কথা, সেই টাকা গুলো গেলো কথাই বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের তদন্ত দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাসহ সচেতন অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে হরিপুর দ্বিতীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক(ভারপ্রাপ্ত) নহির উদ্দিনের সাথে সরেজমিনে গিয়ে কথা বলা হলে তিনি বলেন,এসব বিষয়ে সভাপতির অনুমতি ছাড়া কোন তথ্য দেয়া যাবেনা, আপনারা সভাপতির সাথে যোগাযোগ করেন,স্কুলের যা কিছু সব সভাপতি তদারকি করেন। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন খানের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলা হলে তিনি বলেন, আমি বাহিরে আছি, পরে কথা হবে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান জানান, এবার আমনের জন্য ১লাখ ৬০হাজার টাকা দিয়ে স্কুলের জমি টেন্ডার দেয়া হয়েছে বলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি জানিয়েছেন। স্কুল ফান্ডের টাকা স্কুলের উন্নয়ন কাজে ছাড়া খরচ করার কোন সুযোগ নেই,যদি উন্নয়ন কাজে ব্যয় না করে অন্য কাজে ব্যয় করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্ব.বা/বা
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *