আন্দোলন দমনে আরও কঠোর হচ্ছে সরকার

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে আছে বিএনপি। একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে সমমনা দলগুলোও। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে এত দিন কিছুটা নমনীয়তা দেখালেও আন্দোলন মোকাবিলায় এবার কঠোর হচ্ছে সরকার। পুরোনো মামলায় গতি এনে চাপে রাখা হচ্ছে বিএনপির নেতাদের। গত ২৮ জুলাইয়ের পর থেকে বেড়েছে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও ধরপাকড়।

এদিকে ক্ষমতাসীনদের কঠোর অবস্থানে বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকে ঘিরে প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তারের আতঙ্কে নেতা-কর্মীদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাঁর বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সর্বশেষ গত শনিবার সারা দেশে পদযাত্রা করেছে বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘিরে নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের মারমুখী আচরণের মুখে পড়েছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন শর বেশি নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন অন্তত অর্ধশত।

বিএনপির অভিযোগ, নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের পর থেকে প্রতিদিনই গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রোববার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সরকার যেভাবেই হোক, সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে অন্যায়ভাবে বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরা আবার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে।’

ফখরুল অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো ক্ষমতাসীনদের টিকিয়ে রাখতে একইভাবে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্যটা হলো বিরোধী দলকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া। এর অংশ হিসেবে ছাত্রদলের ছয় নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের নাটক সাজানো হয়েছে।

তবে সরকার যতই কঠোর হোক, বিএনপি সহিংসতা এড়িয়ে আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনায় অটল বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তাঁরা বলেছেন, কোনোভাবেই অসহায় আত্মসমর্পণ নয়, শেষতক লড়ে যাবেন দলের নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির অহিংস নীতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যদি অহিংস পথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, তারা সঠিক পথে আছে। কিন্তু সরকারের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকার যদি বিরোধীদের বাদ দিয়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে বলব যে তারা ভুল করছে।’

তবে দুই পক্ষের বর্তমান অবস্থানকে এখনই ‘চূড়ান্ত’ কিছু বলে মনে করছেন না এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সময় গড়ানোর সঙ্গে মনোভাব ও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় যেতে মরিয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংবিধানসম্মতভাবে নিজেদের শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্য পূরণ করতে চায় তারা। এ জন্য ছকও কষে রেখেছে দলটি। সেই ছক অনুযায়ী যা করা দরকার, তা-ই করবে আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ যারা সরকার পতনের আন্দোলন করছে, তাদের এতটুকু ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। এ লক্ষ্যে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ দখলে রাখার কথা বলছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। বিএনপি যদি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে, তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।

আওয়ামী লীগের সামনে দুটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘একটা অপশক্তি এ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না এবং নির্বাচন হতে দিতে চায় না। তাদের মোকাবিলা করা একটা চ্যালেঞ্জ। পক্ষান্তরে মানুষকে নির্বাচনমুখী করা এবং আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোটদানের জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে তৃণমূলের সব মানুষের কাছে যাওয়া। সেই নির্দেশনাই শেখ হাসিনা দিয়েছেন।’

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *