বাসরের আগে বিদ্যুতায়িত হয়ে বরের মৃত্যু, নির্বাক কিশোরী নববধূ

রাজশাহী লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ের আয়োজন। পুরো বাড়ি সাজানো হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। কনে নিয়ে বাড়ি এসেছেন বর। এরপর গল্পটা হতে পারত আরও রঙিন। হতে পারত নবদম্পতির সুখের সংসার। তা হয়নি, গল্পের শেষটা হয়েছে মর্মান্তিক। বিয়েবাড়ির সাজানো আলোকসজ্জায় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ গেছে বরের। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খারিজাগাতি মোল্লাপাড়া গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

একমাত্র ছেলের বউকে বরণ করে নিতে যে মা অপেক্ষা করে ছিলেন কিংবা যেই কিশোরী বধূ তার লাল-নীল রঙিন সংসারের স্বপ্নে বিভোর ছিল, মুহূর্তেই সব বিষাদে পরিণত হলো।

নিহত বর শাকিল হোসেন (২১) ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। শাকিল চালের ব্যবসা করতেন। তাঁর বাবার নাম আবদুস সালাম। গতকাল দুপুরে একই উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের বুলবুল হোসেনের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে শাকিলের বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে পা রাখার পরই স্বামীকে হারিয়ে নির্বাক এই কিশোরী বধূ।

আজ শুক্রবার সকালে বরের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, মরদেহ দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে। বাড়িটিতে তখনো আলোকসজ্জার বাতিগুলো লাগানো ছিল। সাজানো ছিল বাসরঘর। আজ অনুষ্ঠানের জন্য বাড়ির সামনে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছিল আগেই। এই প্যান্ডেলের নিচেই বসে আছেন নিহত বরের আত্মীয়স্বজন। সবার চোখে-মুখে শোকের ছায়া। একটি ঘরে নির্বাক কিশোরী বধূকে নিয়ে বসে আছেন তার বাড়ি থেকে যাওয়া স্বজনেরা। শাকিলের মা জান্নাতুল মাওয়া শুধু কাঁদছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন কেউ কেউ।

শাকিলের স্বজনেরা জানান, দুপুরে কনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেলে বরপক্ষ কনে নিয়ে আসে। সন্ধ্যার পর বর নিজেই বাড়িতে আলোকসজ্জার বাতিগুলো জ্বালিয়ে দেন। পরে রাত ৮টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বারান্দার গ্রিলে হাত দেন শাকিল। এ সময় তিনি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন। আলোকসজ্জার বৈদ্যুতিক তার লিকেজ হয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে ছিল বাড়ির বারান্দার গ্রিল। শাকিলকে বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়তে দেখে তাঁর চাচা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এরপর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর রাতেই তাঁর মরদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। আজ সকালে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।

শাকিলের মা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। কত শখ করে তার বিয়ে দিনু। আমার ছেলে, ছেলের বউ বাড়িতে থাকবে। কত আনন্দ করব। আমার আর কিছুই থাকল না। ছোট মেয়েটাকে এখন কী করে সান্ত্বনা দিব আমি। এই মেয়েটার এখন কী হবে!’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘শাকিল ছেলেটা আমাদের চোখের সামনে বড় হলো। খুবই ভালো একটা ছেলে ছিল সে। বিয়ের দিন তার এভাবে মারা যাওয়াটা মেনে নেওয়ার মতো না। পুরো গ্রামের মানুষ ভীষণভাবে শোকাহত।’ সূত্র: আজকের পত্রিকা

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *