বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলাতে পারে একটা ব্রিজ, ডিজাইনেই কেটে গেল দুই বছর

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী): রাজশাহীর বাঘা উপজেলার যোগাযোগ বিছিন্ন পদ্মার চরে আলাদা ইউনিয়ন চকরাজাপুর। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় একাধিক সেবা পেলেও স্বাধীনতার এত বছরেও সেতুর অভাবে উপজেলার বৃহৎ অংশ ব্যাপক উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে।

উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়নটির দুরুত্ব ১৫ কিলোমিটার। পলাশি ফতেপুর, ফতেপুর পলাশি,কালিদাখালি,উদপুর, দাদপুর, কড়ারি নওশারা, চৌমাদিয়া সহ ১২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল।

এপার-ওপারের হাজারো লোকজন প্রতিদিন যাতায়াত করেন-গড়গড়ি ইউনিয়নের চানপুর,ব্যংগাড়ি, সরেরহাট, খায়েরহাটসহ বাঘা পৌরসভার কলিগ্রাম এলাকার সড়কঘাট ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর-গোকুলপুর খেওয়া ঘাট দিয়ে।

সেতুর অভাবে পদ্মার মরা খাল পার হয়ে চরম দুর্ভোগে চলাচল করতে হয় বর্ষায় নৌকা ও খরা মৌসুমে বাঁশ বা কাঠের সাঁকোতে টোল দিয়ে। সোমবার (১১-০৩-২০২৪) সরেজমিন দেখা যায়, অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। সম্প্রতি পিচঢালা পাঁকা রাস্তা হয়েছে। ২০১২ সালে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর অন্ধকার দুর করেছে বিদুৎতের ঝলমলে আলো। ২টি কমিউিনিটি ক্লিনিক, ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এলাকায় গড়ে উঠেনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্ষায় নৌকাডুবি, বাঁশের সাঁকো ভাঙাসহ নানা দুর্ঘটনার শিকারও হতে হয় তাদের। অসুস্থ রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। তাদের অভিযোগ টিআর, কাবিটাসহ স্থানীয় সরকারের আওতায় যে উন্নয়ন বরাদ্দ পাওয়া যায়, সেগুলো দিয়েও ঠিকমতো রাস্তার কাজ হয়না। প্রয়োজন মেটাতে আবাদি জমির পাশ ও নদীর পাড় দিয়েই চলাচল করতে হয় তাদের।

নারায়নপুর গ্রামের আসলাম সর্দার,সুলতানপুর গ্রামের মন্টু হোসেন ও চানপুর গ্রামের চান্দের আলী জানান,২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নদীতে ডুবে মারা যায় নবম শ্রেণীর ছাত্র সবুজ। ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে গড়গড়ি ইউনিয়নের খানপুর এলাকার রাজু মাঝির ঘাটে নৌকা ডুবিতে কলেজ ছাত্র সুমন ও স্কুল ছাত্র মনিরুল মারা যায়।

চাষী সেকেন্দার জানান, খেওয়া ঘাট দিয়ে পারাপারের কারণে নদীর ওপারে আবাদি পণ্যের দাম কম পাই। খরচের কারণে পণ্য বিক্রিতে মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়। সবজি ব্যবসায়ী রাহাত আলী জানান,বাঁশের সাকো পার হতে ২০ টাকা দিতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিতেই পার হচ্ছে বছরের পর বছর । কেউ কথা রাখছে না। মরার আগে হয়তো ব্রিজ দেখা হইবে না।
চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেল রানা জানান, সারা বছরই নৌকায় খেওয়াঘাট পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়।

শাহ্দৌলা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নৌরিন দেওয়ান ও মুন্নি খাতুন বলেন, চরাঞ্চল থেকে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ওপারের কলেজে আসা যাওয়া করতে হয়। নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে সঠিক সময়ে পৌঁছানো দুষ্কর হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থী জাহেদুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তি বেশি হয়।

অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হালিম মোল্লা বলেন, প্রায় ২ বছর আগে তার বাড়ির দক্ষিনে পদ্মা নদীর খালের ওপর ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাটি পরীক্ষা (সোয়েল টেষ্ট) করে গেছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি।

এপারের গড়গড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের আওতায় তার ইউনিয়নের শিমুল তলা নামক ঘাটে ২০২ মিটির ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ডিএম বাবুল মনোয়ার বলেন,২০১২ সালে হালিম মোল্লার বাড়ির দক্ষিনে ৬০০ মিটার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেটি বাস্তবায়ন হলে এলাকাটা উন্নত হবে, এই অঞ্চলের মানুষ রাস্তাঘাটের সেবাটা পাবে। টিআর, কাবিটাসহ স্থানীয় সরকারের আওতায় উন্নয়ন বরাদ্দের বিষয়ে বলেন, তা দিয়ে কাজ হয়না এমন নয়। তবে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর রাস্তার উন্নয়নের জন্য প্রকল্প দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী বেলাল হোসেন বলেন, সোয়েল টেষ্টের পর ডিজাইন চলছে। তবে কবে নাগাদ হবে,তা সঠিকভাবে বলতে পারছিনা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *