তানোরে ফিল্মি স্টাইলে জমি জবরদখলের অভিযোগ

রাজশাহী লীড
তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাড়াটিয়া বহিরাগত দেশীয়অস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ফসলি জমি জবরদখল করা হয়েছে। গত, ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) নোনাপুকুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে।এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।এতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলে চরম নিরাপত্তা হীনতায় রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন সকালে অধ্যক্ষ মিজানের নেপথ্যে মদদে  প্রকাশ্যে দিবালোকে কোয়েলহাট গ্রামের কালামের পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান মুস্ত, মৃত ইসরাইল হোসেনের পুত্র কালাম ও মিজানুর রহমান এবং জব্বার আলীর পুত্র আব্দুস সালামের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত প্রায় অর্ধশতাধিক বহিরাগত লাঠিয়াল বাহিনী ত্রাস সৃস্টি করে, ফিল্মি স্টাইলে ফসলী জমি জবরদখল করেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, এক নারী ঘটনা মুটোফোনে ভিডিও করতে গেলে তার মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে লাঞ্চিত ও শ্লীলতাহানি  করা হয়েছে। এমনকি দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েকটি ভুমিহীন পরিবারকে ঘরে আটকে রেখে জমি জবরদখল করা হয়। এসময় পুরো গ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীযরা জানান, কোয়েল গ্রামের কালামের পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘদিন যাবত এসব জমি জবরদখল করতে নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে আসছে। এদিকে গত ২ এপ্রিল মঙ্গলবার  নোনাপুকুর গ্রামের মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী রাশিদা বিবি বাদি হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান দিগরকে বিবাদী করে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে নিম্ন তফশীল বর্ণিত ২৪/মুন্ডুমালা/২০০০নং ভিপি কেস ভুক্ত সম্পত্তি, যাহা আমি সরকারী নিয়ম অনুযায়ী লীজ গ্রহণ করিয়া বিগত প্রায় ৩৫ বছর যাবৎ শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছি। বর্তমানে আমার উক্ত ভিপি কেস ভুক্ত সম্পত্তির লীজ নবায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আবারও পূর্ণরায়  সহকারী কমিশনার (ভূমি), তানোর, রাজশাহী বরাবর লীজ গ্রহণের জন্য আবেদন করিয়াছি। কিন্তু উপরোক্ত বিবাদীগণ হিংসাক্ত মনোভাব লইয়া পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমার সম্পত্তি জোর পূর্বক ভাবে দখল করার প্রচেষ্টা করিতেছে। আমি বিবাদীগণকে নিষেধ করিলে বিবাদীগণ আমাকে বিভিন্ন ভাবে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বিবাদীগণ আমাকে প্রতিনিয়ত মিথ্যা প্রলোভন দেখাইয়া বলে যে, এই সম্পত্তি আমাদের সরকার কর্তৃক আমাদের নামে লীজ প্রদান করিয়াছে। অত:পর বিবাদীগণ বিভিন্ন রকমের হুমকি দিয়া বলে যে, যে কোন উপায়ে আমরা এই সম্পত্তির দখল নিবো। আর যদি তোমার নিজ ইচ্ছাই দখল না ছাড়ো তাহলে আমরা তোমাকে প্রাণে মারিয়া ফেলে ওই সম্পত্তিতে পুতে রাখবো বলে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতিসহ প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করে। এমনকি আমি আমার উক্ত সম্পত্তিতে গেলে বিবাদীগণের সঙ্গে মারামারিসহ যে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা হওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। এমতাবস্থায় নিরুপাই হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।
কিন্ত্ত অভিযোগ করার একদিন পরেই  প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা এসব জমি জবরদখল করছে।
অন্যদিকে মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মফিজ উদ্দিন দিগরকে বিবাদী করে আদালতে ১৪৪ ধারা জারী করেন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রাজশাহী এর মামলা নং-৩২৮পি/২৪, ধারা-১৪৪ ফৌঃকাঃবিঃ এবং প্রসেস নং- ৬০৮ (২) তারিখ-০২/০৪/২০২৪ খ্রিঃ। আদালত থেকে বলা হয় আপনাদেরকে নোটিশের মাধ্যমে জানানো জায়তেছে যে, দরখাস্তকারী বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, রাজশাহী ১ম পক্ষ হাজির হয়ে ২য় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সূত্রে বর্ণিত মামলা দায়ের করিয়াছেন। এমতাবস্থায় আপনারা উভয় পক্ষ নারিশ সম্পত্তিকে কেন্দ্র করিয়া কোন প্রকার আইন শৃঙ্খলার শান্তি ভঙ্গ করিবেন না। নালিশী সম্পতির বিবাদীয় বিষয়টি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নিষ্পতি করিয়া লইবেন। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তির কোন ধরনের কার্যক্রম ও আকার পরিবর্তন করা যাবে না। ইহার অন্যথায় হইলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিজ্ঞ আদালতকে অবহিত করা হইবে পরবর্তী ধার্য তারিখ-২৬/০৫/২০২৪ ইং।  সম্পত্তির তফশীল
জেলা-রাজশাহী, থানা-তানোর, মৌজা-নোনাপুকুর, জেল নং-৮৯, আরএস খং নং ১১৫, আর,এস দাগ নং ২৯৪, রকম ধানী ও পরিমাণ ৬৫৫০। কিন্ত্ত বাদি মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই আদালতের আদেশ উপেক্ষা ও বহিরাগত ভাড়াটিয়া লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জোরপুর্বক নালিশী সম্পত্তি জবরদখল করেছেন। উপজেলা ভুমি অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন ভিপি সম্পত্তি ৩৫ বছর ভোগদখল করা অবস্থায় অন্যকে ইজারা দেয়া হয় কি বিবেচনায়। সেই বিষয়টি অধিকতর তদন্তের দাবি রাখে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান মুস্ত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের নামে জমির খাজনা-খারিজ করা আছে। তিনি বলেন, তারা শান্তিপূর্ণ ভাবে জমিতে ধান রোপণ করেছেন। এবিষয়ে তানোর থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *