এটা পেশাদার জগৎ, কিছু বলার নেই

খেলাধুলা

স্বদেশবাণী ডেস্ক: ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আসন্ন সিরিজকে সামনে রেখে ওয়ানডে ও টেস্ট-এর জন্য প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। যেখানে জায়গা হয়নি গত মার্চে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ৫০ ওভারের ম্যাচ খেলা সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপকে সামনে রেখেই দল গঠন করা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।

গত ৪ জানুয়ারি সকালে দল ঘোষণার সময় নান্নু বলেন- ‘২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দল সাজানো হচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে আমরা মাশরাফির সাথে কথা বলেছি এবং এটি নিয়ে তার কোনও আপত্তি নেই।’

এদিকে, গত মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পরই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়া ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি বলেন- “এটা পেশাদার জগৎ। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমি পেশাদারীভাবেই নিচ্ছি এটাকে। আর কিছু বলার নেই।”

এই দল ঘোষণার আগে তার জন্য নিজের অবস্থান উপস্থাপনের সুযোগ ছিল কেবল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। সেখানে যা করার ছিল, তিনি করেছেন। অনেকের ধারণার চেয়েও বেশি করেছেন। নির্বাচকরা তাকে বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে বলেছেন- ভবিষ্যতে তাকানো, তরুণদের জায়গা দেওয়া, ২০২৩ বিশ্বকাপের ভাবনা। এখানে মাশরাফির কিছুই করার নেই। বাদ পড়ার পর তার এই ছোট্ট প্রতিক্রিয়া তাই সম্ভবত যথার্থই।

মাশরাফিকে দলে রাখলে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি থাকত। বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষেও যুক্তি আছে। মূল ব্যাপারটা হলো- যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তারা নিজেদের কাছে কতটা পরিস্কার ও ভাবনায় কতটা অটল!

এদিন নির্বাচকরা যে কারণগুলো বলেছেন, সেগুলোর সঙ্গে কেউ একমত হোক বা না হোক, ভাবনাগুলোর পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি অন্তত আছে। সেটার জন্য সাধুবাদ। কিন্তু বোর্ড সভাপতি গত কিছুদিনে বা নানা সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে ধরণের কথা বলেছেন, তাতে সন্দেহ-সংশয়-প্রশ্নের অবকাশ থাকেই। বিশেষ করে বোর্ডের কিছু কর্তা যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফোন করে বলেন- মাশরাফিকে বাদ দেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি করতে, বিরুদ্ধে নিউজ করতে! তখন প্রশ্ন উঠে যায়- তাদের ভাবনা কতটা সৎ ও ক্রিকেটীয়!

যাইহোক, বাস্তবতা হলো- মাশরাফি এখন আর দলে নেই এবং দল সামনে তাকাচ্ছে। আপাতত অফিসিয়াল কারণগুলোতেই ভরসা রাখা যাক। যদিও বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভবিষ্যৎ, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, এসব উপহাসের মতো শোনায়। তারপরও নির্বাচক কমিটি, টিম ম্যানেজমেন্ট বলেছে- নতুন বছরে নতুন শুরুর কথা। সেই আশ্বাসে ভরসা রাখাই শ্রেয়। তাতে আশা করা যায় যে, সত্যিকার অর্থেই আমরা পরিকল্পনার ছাপ দেখতে পাব, দল এগিয়ে যাবে।

মাশরাফির নেতৃত্বে ৫০টি ওয়ানডে জিতেছে বাংলাদেশ, ভবিষ্যতের অধিনায়কেরা এটিকে নতুন উচ্চতায় তুলে নেবেন। বিশ্ব সেরার ট্রফি আসবে দেশে। আশা করি, ভবিষ্যতের সঙ্গে বর্তমানের সমন্বয় ভালোভাবে করা হবে। ২০২৩ বিশ্বকাপে দল সরাসরি কোয়ালিফাই করতে পারবে। বিশ্বকাপের জন্য দল গোছাতে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা হারাতে হবে না। আশা করি, তাকে বাদ দেওয়ার যে মানদণ্ড বলা হয়েছে, সবার ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে।

তরুণ যাদেরকে সুযোগ দেওয়া হবে, তাদের ক্ষেত্রে আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্ববোধের প্রমাণ রাখবেন। তরুণদের মধ্যে যাকেই দলে নেওয়া হবে, সংবাদমাধ্যম ও সমর্থকদের দায়িত্ব হবে- দ্রুতই তাদেরকে মাশরাফির সঙ্গে তুলনা না করা। সময় দেওয়া। নির্বাচক কমিটি ও টিম ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব, সঠিক প্রতিভা বাছাই করা ও তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়া।

আর ৬-৮-১০-১১ বছর ধরে খেললেও এখনও যেসব পেসার বা ক্রিকেটারদের ওপর দল নির্ভর করতে পারে না, সেই জায়গায় যারা নিজেদের নিতে পারেননি, তাদের দায়িত্ব নির্ভরতার জায়গায় নিজেদের নিয়ে যাওয়া। সত্যিই যদি নতুনভাবে দলের পথচলা শুরু হয়, সেই পথের সারথী হতে হবে। আগের লাউ থেকে এখন কদু হলে বিপদ, জাদু হতে হবে!

২০১৯ বিশ্বকাপের পর কিংবা বাদ পড়ার আগেই মাশরাফির অবসর নেওয়া উচিত ছিল যারা বলছেন, আমার মনে হয়, এই আলোচনার মূল্য খুব একটা নেই। অনেক আগেই সেই অধ্যায় শেষ। মাশরাফি তো সব পরিস্কারই করে দিয়েছেন!

অনেককেই দেখছি, ফেসবুকে লিখছেন, নানা জায়গায় বলছেন যে- মাশরাফি নাকি ছ্যাঁচড়ামো-ছ্যাবলামা করছেন। অথচ জোর করে দলে রাখার মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, এজন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, নেতৃত্ব ছেড়েছেন। অনেকবার স্পষ্ট করে এটাও বলেছেন, জাতীয় দলে না নেওয়া হলেও সমস্যা নেই, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন। একজন খেলোয়াড় আর কী করতে পারেন!

একমাত্র চাপ ছিল সম্ভবত তার পারফরম্যান্স। এই যে এতদিন পর খেলতে নেমে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে ভালো বোলিং করলেন, তৃতীয় ম্যাচেই ৫ উইকেট নিলেন, এসবই ছিল চাপ। ভালো চাপই তো, নাকি ভালো বোলিং করাও ছ্যাঁচড়ামো?

যাই হোক, নির্বাচকরা ভবিষ্যৎ ভেবেছেন। খুব ভালো। মাশরাফি অনেক আগেই বলেছেন, বাকি যতদিন খেলবেন, আনন্দ নিয়ে খেলতে চান, মনের খোরাক মেটাতে চান। এটুকু অধিকার শুধু তার মতো কিংবদন্তির কেন, যে কোনও খেলোয়াড়ের আছে। সেখানেও কেউ তাকে শূলে চড়াতে চাইলে বুঝতে হবে, সেই চাওয়ায় কেবল ব্যক্তিগত ক্রোশ-দ্বেষই আছে!

ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতার পালা এখনই নয়। কে জানে, গল্পের বাকি আছে হয়তো! আপাতত মাশরাফির জন্য ভালোবাসা, দেশের ক্রিকেটের জন্য শুভ কামনা। নতুন দিনের যে গান বোর্ড-নির্বাচকরা-টিম ম্যানেজমেন্ট গাইছেন, সেই গান যেন সুরেলা হয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *