খেলাপি ঋণে আর ছাড় নয়

অর্থনীতি

স্বদেশবাণী ডেস্ক: দেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে।

কোনো কোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হবে। তবে করোনার কারণে খেলাপি ঋণে ও কিস্তি পরিশোধে গত বছরে যে ছাড় দেওয়া হয়েছিল তা আর দেওয়া হবে না।

ফলে গত ১ জানুয়ারি থেকে নিয়ম অনুযায়ী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। কিস্তি পরিশোধ না করলে সংশ্লিষ্ট ঋণকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করতে পারবে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে সারা দেশে নতুন সিনেমা হল নির্মাণ ও পুরনো সিনেমা হল সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে অচিরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে একটি নীতিমালা তৈরি করে সার্কুলারে জারি করা হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে বিশেষ করে দেশের ও বৈদেশিক ব্যবসাবাণিজ্যে মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এতে ব্যবসায়ীদের কাছে টাকার প্রবাহ কমে গিয়েছিল। ফলে অনেকের পক্ষেই নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

যে কারণে গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি আদায়ে গ্রাহকদের চাপ দেওয়া বা কিস্তি দিতে না পারলে ঋণকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল। তিন দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়।

ফলে গত বছরের ঋণ আদায় কার্যক্রম যেমন বাধাগ্রস্ত হয়, তেমনি নতুন করে কিস্তি দিতে ব্যর্থতার কারণে কোনো ঋণকে নতুন করে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি।

গত ১ জানুয়ারি থেকে এ নীতি সহায়তার সুবিধা আর বাড়ানো হয়নি। ফলে ১ জানুয়ারি থেকে ঋণের কিস্তি নিয়মিত শোধ করতে হবে। একই সঙ্গে কোনো গ্রাহক নিয়ম অনুযায়ী কিস্তি শোধ না করলে ওই ঋণকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করতে পারবে।

বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এ ছাড় দেওয়া হয়েছিল। করোনার কারণে দেওয়া এ দুটি নীতি সহায়তার মেয়াদ আর নতুন করে বাড়ানো হবে না। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ আদায় পরিস্থিতি ও ব্যবসাবাণিজ্যের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছে। ওইসব তথ্য বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

করোনার প্রভাব মোকাবিলার জন্য গত বছরে মোট ৩১টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছরে নতুন করে আরও দুটি প্যাকেজ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টি হচ্ছে ঋণনির্ভর কম সুদের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ। বাকিগুলো নীতি সহায়তা। আর্থিক খাতের প্রণোদনা প্যাকেজগুলো অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নীতি সহায়তা বাবদ যেসব ছাড় দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে একটি বাদে বাকি সব বহাল থাকবে।

বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রফতানি খাতেও অনেক ছাড় রয়েছে। কর্মসংস্থান বাড়ানো ও নতুন শিল্প স্থাপনেও কম সুদে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে তথ্য নিয়ে দেখেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সার্বিকভাবে এখন তারল্য পরিস্থিতি বেশ ভালো। প্রণোদনার আওতায়ও তহবিল রয়েছে। এগুলো থেকে গ্রাহকরা কম সুদে ঋণ নিতে পারছে। তবে গ্রাহকদের প্রণোদনার তহবিল ব্যবহারের শর্তগুলো পরিপালন করতে হচ্ছে।

সূত্র জানায়, রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদানে ৮ হাজার কোটি টাকার তহবিলের পুরোটাই ইতোমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। বড় শিল্প ও সেবা খাতে ঋণ দিতে ৪০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের এখনও ৩০ শতাংশের বেশি অর্থ রয়েছে।

এর মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য দেওয়া হয়েছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। এ তহবিলেও অর্থ রয়েছে। কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের তহবিলেও ৪৫ শতাংশের মতো অর্থ রয়েছে। এছাড়া কৃষি, রফতানি খাতসহ অন্যান্য খাতেও ঘূর্ণায়মান তহবিল দেওয়া হয়েছে। সেগুলোও চলমান থাকবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *