এসএসসির ফরম পূরণের পর জানা গেল জেএসসিতে ফেল!

শিক্ষা

স্বদেশবাণী ডেস্ক: নবম ও দশম শ্রেণিতে দুই বছর যথারীতি লেখাপড়া করে ক্লাস পরীক্ষা ও টেস্টে পাস করে এসে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের পর মোসাদ্দেক আলী নামে এক শিক্ষার্থী জানতে পারল জেএসসিতে সে ফেল করেছে। আর জেএসসিতে ফেলের কারণে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সে অংশ নিতে পারছে না। এতে ওই শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার পরিবার।

এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এদিকে ওই শিক্ষার্থীর বিগত প্রায় চার বছরের সব পরিশ্রমসহ শিক্ষাজীবনের চরম বিপর্যয় ঘটলেও নির্বিকার প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। নিজেদের ভুল শিকার করার পরিবর্তে তারা উল্টো মৃত প্রধান শিক্ষকের দোহাই দিয়ে অভিভাবককেই দোষারোপ করে চলেছেন। এতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অসহায় দরিদ্র পরিবার।

বৃহস্পতিবার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের মো. জামিল উদ্দিন বলেন, তার ছেলে মোসাদ্দেক আলী এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু স্কুল থেকে জানানো হয় সে পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ অষ্টম শ্রেণিতে জেএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করেছিল। সে বিষয়ে সম্পূরক পরীক্ষা না দেওয়ায় তার জেএসসির সনদপত্র পাওয়া যায়নি।

অথচ সরকার ঘোষিত চলতি বছরের আগামী ১৪ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ লক্ষ্যে স্কুলগুলোতে বিলম্ব ফি ছাড়া এবং বিলম্ব ফিসহ দু’দফায় ফরম ফিলাম হয়েছিল। প্রথম দফা শুরু হয় এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দফায় শুরু হয় ৯ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু মোসাদ্দেক দ্বিতীয় দফায় এসএসসি ফরম ফিলাম করে।

এ বাবদ যথারীতি টাকাও অফিস সহকারীকে জমা দেয়। এডমিট কার্ডের সময় ঘনিয়ে আসায় কয়েকদিন আগে স্কুলের কেরানি (অফিস সহকারী) মো. রাসেদুল ইসলাম বোর্ডে সামান্য ভুল আছে তা শোধরানোর জন্য এক হাজার টাকা চেয়ে নেন আমার কাছে।

আমি সেটাও দিলাম, ভাবলাম অফিসের কোনো সমস্যা থাকতে পারে। অথচ গত দুদিন আগে আমার ছেলেকে ডেকে অফিস সহকারী বলেছে, তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। তোমার সমস্য কোনোভাবেই সমাধান সম্ভব হলো না।

তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন হলো— আমার ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে ফেল করে থাকলে তাকে কীভাবে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় এবং কেমন করে সে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করল এবং টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে পাসও করল? এতদিন তারা বিষয়টি কেন জানাননি? কেন তারা আমার ছেলের জীবনের এত বড় ক্ষতি করল? এর দায় কার? এখন তারা বলছে— এতদিন যা খরচ হয়েছে তা ফেরত দেওয়া হবে।

মো. জামিল উদ্দিন বলেন, কেরানির মাধ্যমেই আমার ছেলেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছি। কোনো প্রকার ভুল হয়ে থাকলে তিনিই করেছেন। তার কারণেই একজন শিক্ষার্থীর এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। তিনি প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আমাদের বিপদে ফেলেছেন।

এর মধ্যে বোতলাগাড়ি মাঝাপাড়ার রমজান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, নাজমুল হকের ছেলের ক্ষেত্রেও একইভাবে এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় জানতে পারে যে তার ছেলে জেএসসিতে পাস করেনি। এতে ওই শিক্ষার্থীদের জীবন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

এ ব্যাপারে স্কুলের অফিস সহকারী রাসেদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, যা করেছি প্রধান শিক্ষক মৃত মোখলেছুর রহমানের নির্দেশেই করেছি। ভুল হয়ে থাকলে তা প্রধান শিক্ষকের। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো দোষ নেই।

নবম শ্রেণিতে ভর্তির সময় কেন তার কাগজপত্র না দেখেই তাকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি মিসটেক হয়েছে। অনেক সময় এমন হয়।

সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহেনা ইয়াসমিন মোবাইল ফোনে জানান, এ ধরনের কোনো বিষয় তার জানা নেই। তবে এমন হয়ে থাকলে তা সদ্য মৃত প্রধান শিক্ষক কীভাবে করে গেছেন তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সে অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিস সহকারী যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকেন, তা হলে তার ব্যাপারেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মৃত্যুবরণকারী প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী সৈয়দপুর শহরের মিস্ত্রিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হালিমা বেগম জানান, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে দোষারোপ করে অনেকেই নিজের অপরাধ ঢাকতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমার স্বামী কোনোভাবেই কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *