স্বদেশ বাণী ডেস্ক : এক সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান ভাবা হতো ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে। তবে সেই কোহলিই গত তিন বছর ধরে নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন। ২০১৯ সালে সবশেষ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি। একসময় অপেক্ষা বাড়ছিল সেঞ্চুরি খরা কাটানোর, এরপর ক্রিজে টিকে থাকাটাও যেন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ফর্মহীন কোহলির জন্য। টেস্ট, টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে সব ফরম্যাটেই ব্যর্থতার বৃত্তেবন্দি বিশ্বসেরা এ ব্যাটার। চলতি ইংল্যান্ড সফরেও বিরাটের ব্যাটে রানখরা চলছে। ব্যর্থ হচ্ছেন প্রতি ম্যাচেই।
এদিকে কোহলির এমন দুর্দিনে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন ‘চিরশত্রু’ পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা। বাবর আজম, রিজওয়ান কিংবা হারিস রউফরা তাকে সমর্থন করে পোস্ট দিয়েছেন। যদিও স্বদেশি ভারতের সাবেক অনেক ক্রিকেটারের মত কোহলিকে এবার বসানো উচিত। এ তালিকায় আছেন কপিল দেব, অজয় জাদেজা ও ভেঙ্কটেশ প্রসাদের মতো তারকা ক্রিকেটাররা। এমনকী সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার এবং বর্তমান বোর্ড প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীও আকারে ইঙ্গিতে কোহলির সমালোচনায় মেতেছেন।
কদিন আগে পাকিস্তানের উইকেটকিপার ব্যাটার রিজওয়ানের একটি মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। জানা যায়, কোহলির ফর্মে ফেরার জন্য প্রার্থনা করছেন তিনি। একটি স্পোর্টস ওয়েবসাইটে দেয়া সাক্ষাৎকারে রিজওয়ান বলেন, কোহলি চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। এ মুহূর্তে আমরা ওর জন্য প্রার্থনা করছি। কারণ সে অত্যন্ত পরিশ্রমী ক্রিকেটার। কঠিন সময় আসে এবং সহজও হয়ে যায়। একজন ক্রিকেটার সেঞ্চুরি করে আবার আউটও হয়ে যায়। আমি ওর জন্য শুধু প্রার্থনা করতে পারি। আমি আশাবাদী ও কঠিন পরিশ্রম করেই সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে।
এদিকে পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমও কোহলির এমন দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সম্প্রতি টুইটারে কোহলির সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে তার ক্যাপশনে লেখেন, ‘এই দুর্দিনও কেটে যাবে। শক্ত থাকুন।’ এরপর তিনি হ্যাশট্যাগে দেন কোহলির নাম। পাকিস্তান অধিনায়কের বিশ্বাস, সব ক্রিকেটারের জীবনেই এমন বাজে সময় কাটে। কোহলি সেই সময়ের মধ্যদিয়েই যাচ্ছেন। তবে এ দুঃসময়ও কেটে যাবে, তার জায়গা নিবে সুসময়। টুইটে সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি আরেক ক্রিকেটার হারিস রউফের বিশ্বাস কোহলি দ্রুতই সগৌরবে ফিরবেন।
কদিন আগেই কোহলিকে একহাত নেন ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার কপিল দেব। কোহলির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশ কপিল গেল ৯ জুলাই ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি আপনি টেস্ট দুনিয়ার দ্বিতীয় সেরা বোলার অশ্বিনকে বাদ দিতে পারেন, তাহলে দলের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলিকেও বাদ দিতে হবে। কোহলি দারুণ খেলোয়াড়, কিন্তু সে এখন পারফর্ম করছে না। তাকে সময় দিন, তরুণদের খেলান। যদি আপনি অশ্বিনকে বাদ দিতে পারেন, তাহলে যে কেউ বাদ হতে পারে।’
কোহলির বদলে বর্তমানে যারা ছন্দে আছেন তাদের খেলানোর পরামর্শ কপিলের। পারফরম্যান্স না করেও কেউ নামের জোরে দলের একটা নির্দিষ্ট জায়গা দখল করে নেবে বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না কপিল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যারা রান করছে তাদের খেলাতে হবে। বড় নাম বলে খেলিয়ে দিতে হবে এটা অন্যায়। আপনি সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হতেই পারেন, তার মানে এই না যে টানা ব্যর্থতার পরও আপনাকে খেলাতেই হবে। নির্বাচকদের জন্য কঠিন একটা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু তরুণ যেই খেলোয়াড়রা দিনের পর দিন রান করছে, আপনি তাদের একাদশের বাইরে রাখতে পারেন না।’
অন্যদিকে কোহলির ঘনঘন বিশ্রাম নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচকদের তালিকায় আছেন খোদ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীও। টেলিগ্রাফকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলী বলেন, ‘দল থেকে বাদ যাওয়ার আগে কোনো বিশ্রাম না নিয়ে ১৩ বছর ভারতের হয়ে খেলেছি। কোনো সিরিজ, কোনো ট্যুরে বিশ্রাম নিইনি। এখনকার ক্রিকেটাররা যেমন অনেক বিশ্রাম নেয়, তেমন কিছু করিনি। আমার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে দল থেকে বাদ পড়ার ওই চার-ছয় মাসই আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে একমাত্র ব্রেক।’
সৌরভ আরও বলেন, ‘আমি সারা জীবন একটাই জিনিস বিশ্বাস করেছি। যত খেলব, তত ছন্দে থাকব, ফিট থাকব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে। বেশি ম্যাচ খেললেই শারীরিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’
দেশটির সাবেক ক্রিকেটার ইরফান পাঠান এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘বিশ্রাম নিয়ে কেউ কখনো ছন্দে ফেরেনি।’ ক্রিকেটারদের ঘনঘন বিশ্রাম নিয়ে খুশি নন সুনীল গাভাস্কারও। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটারদের বিশ্রাম দেয়ায় বিশ্বাসী নই আমি। আইপিএলের সময় তো কেউ বিশ্রাম নিতে চায় না, তাহলে জাতীয় দলের জার্সিতেই কেন বিশ্রাম চাই?’ জাতীয় দল থেকে যারা বারবার ছুটি নেয়, যারা একের পর এক ম্যাচ খেলতে চায় না, তাদের চুক্তি নিয়েও বোর্ডকে ভাবার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। যেখানে নাম নেই কোহলির। যদিও বোর্ড তাকে বিশ্রাম দেয়ার কথা বলেছে। তবে বিশ্রাম নাকি বাদ দেয়া হয়েছে এ নিয়ে জোর গুঞ্জন রয়েছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, ফর্মে না থাকায় আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও অনিশ্চিত সাবেক এ অধিনায়ক।
স্ব.বা/ম