ভারতের সুপ্রিম কোর্টে প্রথম বধির আইনজীবী, ইতিহাস গড়লেন সারাহ

আন্তর্জাতিক লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: ভারতের ইতিহাসে প্রথম কোনো বধির আইনজীবী হিসেবে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি–তর্কে লড়েছেন সারাহ সানি। গত ৬ অক্টোবর শুনানির সময় ২৭ বছর বয়সী এ আইনজীবীর জন্য সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নিযুক্ত করে আদালত।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে সানিকে যুক্তি–তর্কে সহায়তা করার জন্য আদালতে সাংকেতিক ভাষার দোভাষীর অনুমতি দেওয়া। ৬ অক্টোবর আদালত সানিকে সহযোগিতা করার জন্য নিজস্ব সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নিযুক্ত করে আদালত। পর তিনি প্রধান বিচারপতি ধনঞ্জয় যশোবন্ত চন্দ্রচূড়ের সামনে উপস্থিত হন।

বিচারপতি চন্দ্রচূড় বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা ভাবছি সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানির জন্যও আমরা দোভাষীর ব্যবস্থা করব, যেন সবাই বিচারকার্যে অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সর্বোচ্চ আদালতে সানির উপস্থিতি ভারতীয় আইনি ব্যবস্থাকে বধির মানুষদের প্রতি আরও অংশগ্রহণমূলক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ করবে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মেনোকা গুরুস্বামী এ ঘটনাকে ‘সত্যিই ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।

সানির সহকর্মী সঞ্চিতা আইন বিবিসিকে বলেন, ‘সানির কাজের ইতিবাচক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকবে। তিনি অনেকগুলো গতানুগতিক প্রথা ভেঙেছেন, এতে আরও অনেক বধির শিক্ষার্থী আইন পড়ায় উৎসাহী হবে এবং বধিরদের জন্য আইনি ব্যবস্থা সুগম করে তুলবে।’

বেঙ্গালুরুর দক্ষিণাঞ্চলের এক বাসিন্দা জানান, সানি দুই বছর ধরে আইন চর্চা করছেন। শহরের নিম্ন আদালতে তাঁর দোভাষী ব্যবহার করার অনুমতি ছিল না। কারণ বিচারকেরা বলতেন, সাংকেতিক ভাষার দোভাষীদের আইনি ভাষা বোঝার মতো আইনি জ্ঞান নেই। তাই সানিকে লিখে নিজের যুক্তি–তর্ক উপস্থাপন করতে হতো।

সানির জন্য সুপ্রিম কোর্টে প্রথম দোভাষী হিসেবে কাজ করা সৌরভ রায় চৌধুরীও আইন নিয়ে পড়াশোনা করেননি। তবে তাঁর আইনজীবী এবং আইনের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুবাদ করার অভিজ্ঞতা আছে। এর আগে দুই মামলায় বধির আইনজীবীর সহায়ক হিসেবে দিল্লি হাইকোর্টে গিয়েছিলেন।

এ মুহূর্তে আইনি ভাষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো ভারতীয় সাংকেতিক ভাষার দোভাষী নেই। তাই এখন যিনিই অনুবাদ করবেন, তাঁকে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে হবে।

বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সানি বলেন, এত দূর আসতে পেরে তিনি গর্বিত। তিনি বলেন, ‘যারা কানে শুনতে পান না তাঁদের আমি দেখাতে চেয়েছি, আমি পারলে তাঁরাও পারবেন।’

সানির জন্ম বেঙ্গালুরুতে। তাঁর যমজ বোন মারিয়া সানি এবং ভাই প্রতীক কুরুভিলাও কানে শুনতে পান না। প্রতীক যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন এবং বর্তমানে টেক্সাসে একটি স্কুলে বধিরদের পড়াচ্ছেন। মারিয়া চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

তাঁদের মা–বাবা সন্তানদের বধির শিশুদের বিশেষ স্কুলে পড়াতে চাননি। তাঁদের তিন ভাইবোনকে নিতে ইচ্ছুক এমন কোনো স্কুল খুঁজে পাওয়াও বেশ দুষ্কর ছিল।

সানি মানুষের ঠোঁটের নড়াচড়া পড়ে এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় পড়ালেখা শেষ করেন। সানি বলেন, ‘অনেকে ঠাট্টা করত, আমি তাদের সঙ্গে তর্ক করতাম।’

সানি বেঙ্গালুরুর সেন্ট জোসেফ কলেজে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর মা স্কুলের পড়াশোনায় সাহায্য করলেও তাঁর আইন পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারতেন না। তবে, ভাইবোন ও বন্ধুদের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছেন।

২০২১ সালে আইনজীবী হওয়ার জন্য বার পরীক্ষা দেন এবং আইন চর্চা শুরু করেন সানি। তিনি বলেন, তিন সন্তানকেই সমানভাবে দেখার জন্য এবং সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করানোর জন্য মা–বাবার কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। সানি বলেন, ‘এ থেকেই আমি আমার স্বপ্ন পূরণের আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম।’

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *