তানোরে ব্র্যাকের ভেজাল আলু বীজে বাজার সয়লাব

কৃষি
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে ব্র্যাকের আলু বীজ কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ভেজাল বীজেও বাজার সয়লাব হয়ে উঠেছে । যত্রতত্র ব্র্যাকের আলু বীজ বিক্রি হওয়ায় এই অভিযোগ সাধারণ কৃষকের কাছে শক্ত হচ্ছে।
জানা গেছে, তানোরে ব্র্যাকের মাত্র একজন আলু বীজ ডিলার রয়েছে। তানোরে চলতি মৌসুমে  দুশ’ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাশ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলায় ৪ জন ডিলার রয়েছে। মোহনপুরে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ মোহনপুর উপজেলা থেকে তানোর উপজেলায় প্রায় তিনগুন বেশী পরিমাণ জমিতে আলু চাষাবাদ হয়।
এদিকে তানোরে ব্র্যাকের বীজ ডিলার ব্যতিত যত্রতত্র এমনকি মুদি দোকানে ব্র্যাকের আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে। এসব বীজ অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছে অনুমোদিত বীজ ডিলারগণ। অভিযোগ রয়েছে, মোহনপুর উপজেলার অধিকাংশ  বীজ ডিলার নীতিমালা লঙ্ঘন করে চোরা পথে তানোর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্র্যাকের আলু বীজ বিক্রি করছে। অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগ, একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ব্র্যাকের বীজের ব্যাগ রিপ্যাক করে খাবার আলু বীজ আলু বলে বিক্রি করছে। এদিকে বীজ আসল-নকল না নিম্নমাণের সেটা বোঝার ক্ষমতা নাই সাধারণ কৃষকের। আর এই সুযোগ নিচ্ছে এসব বীজ বিক্রেতাগণ। এবছর অনেক আগেই অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে উপজেলার সর্বত্র ব্র্যাকের আলু বীজ খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমণ কাটা-মাড়াই সম্পন্ন হতে পুরো নভেম্বর মাস শেষ হয়ে যাবে। তার পর শুরু হবে আলু রোপণ। সেই হিসেবে প্রায় শোয়া এক মাস ধরে বিভিন্ন দোকানে দোকানে এসব আলু বীজ পড়ে থাকায় বীজের (গুণগত মাণ) টেম্পারেচার নষ্ট হবে, এসব বীজ রোপণ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন উৎপাদন হবে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ আলুচাষিরা। ফলে খোলা বাজার থেকে ব্র্যাকের আলুবীজ কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হলে তার দায় নিবে কে ? কৃষকেরা খোলা বাজারে ব্র্যাকের আলু বীজ বিক্রি বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তানোরের কালীগঞ্জহাট ও সরনজাই বাজারের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, তারা ধুরইল বাজারের গোলাম মোর্তুজার কাছে থেকে ব্র্যাকের আলু বীজ কিনে এনে বিক্রি করছেন।
অন্যদিকে ডিলারদের অভিযোগ খোলা বাজারে যত্রতত্র যে কেউ যদি আলু বীজ বিক্রি করতে পারেন। তাহলে ব্যাংক ঋণের লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ডিলারসীপ নেয়ার মানে কি ?জানা গেছে, তানোরে চলতি মৌসুমে আলু চাষে মাঠে নামার প্রস্ত্ততি নিতে শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু এবার আলু চাষে চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে আলু বীজের দাম। খাবার আলুর দাম বেশি হওযায় গত বছরের চেয়ে দ্বিগুন দামে আলু বীজ কিনে চাষাবাদ করতে হবে চাষিদের। এতে এক বিঘা জমিতে চালু চাষের শুরুতেই বীজ বাবদ বাড়তি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি গুনতে হবে। আগমি মৌসুমে বর্তমান দাম অনুযায়ী আলুর দাম না পেলে লোকসান গুনতে হবে চাষিদের। তাই চাষিদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। এছাড়াও এবার বেশি দাম পেয়ে অনেকেই আলু বীজ হিমাগার থেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে বীজেরও সংকট দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা চাষিদের।
স্থানীয় আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- গত বছর বিভিন্ন জাতের আলুর বীজের দাম ছিল ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা মণ। এবছর শুরুতেই সেই আলুর বীজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ থেকে ৪০০০ হাজার টাকা মণে। এক বিঘা জমিতে আড়াই থেকে তিন মণ লাগে বীজ। এতে আলু চাষের শুরুতেই বীজ বাবদ বাড়তি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকসহ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগছে। হালচাষ, সার, শ্রমিকের মজুরি বাবদ লাগছে আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা। এতে  এক বিঘা জমিতে আলু লাগাতেই শুরুতেই খরচ পড়ছে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এছাড়াও আলুর গাছ উঠার পর সেচ, নিড়ানি ও কিটনাশক বাবদ আরও ৫ থেকে ৬ হাজার খরচ হবে। এতে  এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ পড়বে ২১ থেকে ২৩ হাজার টাকা। পুরোদমে আলু চাষ শুরু হলে বীজ সংকট ও দাম বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা চাষিদের। তাই আলু চাষে আদৌ লাভ হবে কি না তা নিয়ে এখনই চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে তানোরের ব্র্যাকের আলু বীজ ডিলার শাহীন আলম বলেন, কেউ খোলা বাজারে  বীজ বিক্রি করলে তারা তো বাধা দিতে পারেন না। তবে ডিলার নিয়োগের পর খোলা বাজারে বীজ বিক্রি করা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন। এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ব্র্যাক আলু বীজ বিভাগের দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *