১৮ বছর ঐতিহ্য গ্রামবাসীর ধনী- গরীব মিলে ব্যাতিক্রমী ঈদ আনন্দ

রাজশাহী

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি: একটা সময় ছিলো যখন মানুষ অবসর সময়সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদযাপন করতো বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ গ্রামীণ নান ঐতিহ্যকে সাথে নিয়ে। তবে সময়ের পরিবর্তনে আজ বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার সেসব প্রাচীন ঐতিহ্য।

ক্রিকেট ফুটবলের ছোয়ায় যখন সবাই মুখরিত তখন প্রযুক্তির উন্নয়নে অনলাইন গেইমস গুলো প্রকাশ পেয়ে যেনো হারিয়ে দিচ্ছে সকল খেলাধুলার আগ্রহ। সেরকম ঈদেও নেই আগের আনন্দ। সবাই এখন মোবাইল মুখি। মাঠের খেলা এমনকি গ্রামীণ সংস্কৃতিতে কোনো আগ্রহ দেখাই যায়না বললেই চলে।

তবে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে ঈদের আয়োজন হয় এক ভিন্ন আঙ্গিকে। সেখানে গ্রামবাসীর নিজস্ব আয়োজন এবং অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় নানারকম গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহি ও প্রচলিত খেলাধুলা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জানাযায়, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ঈদ এলেই এরকম ভিন্ন ধর্মী আয়োজন করে থাকে ওই গ্রামবাসী। এবারের ঈদেও ছিল সেইরকমই আয়াজন। ঈদের আগের দিন বুধবার ঈদ সামগ্রী বিতরণ এবং ঈদের দিন বৃহস্পতিবার বিকালে অনুষ্ঠিত হয় প্রিতী ফুটবল ম্যাচ, মোড়গ লড়াই, চেয়ার সিটিং,পুতুল কোল, বিস্কুট দৌড়, ব্যাঙ দৌড়, হাড়িভাঙ্গা, দড়ি ঘুরানো, কলা গাছে উঠা সহ নানা ঐতিহ্যবাহি ও প্রচলিত খেলা। যাতে অংশ নেন গ্রামের নারী,পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। দেখে মনে হয় যেন সকলে আবার শৈশবে ফিরে গেছে। ঈদের পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সেখানে গ্রামের বাচ্চারা অংশ নেন এবং ফুটিয়ে তুলেন তাদের প্রতিভাগুলো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল কুরআন তেলাওয়াত, হামদ ও নাত, গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, অভিনয়, যেমন খুশি তেমন সাজো ইত্যাদী। পরে ওই রাতেই খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও গ্রামের কোন কাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যাক্তি ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝেও পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। গ্রামবাসীরা জানান, ঈদ মানে খুশি তাই ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ও প্রাচীন বিলুপ্তপ্রায় খেলা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতেই আমরা এ ধরনের আয়োজন করে থাকি।

ওই গ্রামের বাসীন্দা এবং পোড়াবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সামসুল আরেফিন জানান, আমরা চাই এমন খেলাধুলার আয়োজন সব জায়গাতেই হোক। যাতে করে নতুন প্রজন্ম হারানো খেলাধুলাসহ বাঙ্গালির নিজস্ব আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে। তারা যেন বুঝতে পারে আমাদের বাঙ্গালিদেরও একটা সুন্দর বিনোদনের জগৎ রয়েছে যা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এগুলোর ঐতিহ্য ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *