চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

জাতীয় শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: চারুকলার প্রবেশ পথ পেরিয়েই চোখে পড়ে শিক্ষার্থীদের কর্মযজ্ঞ। কেউ রংতুলি দিয়ে আল্পনা বসাচ্ছে সরা ও মুখোশে। কেউ নতুন সরা বানাচ্ছে আবার কেউ সেই সরা বিক্রি করছে। আরো একটু ভিতরে গেলেই চোখে পড়ল আসল কর্মযজ্ঞ। বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি হাতি-ঘোড়ার দেহ কাগজ দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে। আর কেউ কেউ সেই কাগজে আঠা লাগিয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ রং মাখাচ্ছে। কারো যেন সময় নেই। একটা ছেড়ে আরেকটা করছে। গতকাল বুধবার সকালে চারুকলায় সরেজমিন এ রকম চিত্র দেখা গেছে। ১৯৮৫ সালে যশোরে প্রথম শুরু হয় এ শোভাযাত্রা।

সেই থেকে শোভাযাত্রা আস্তে আস্তে উৎসবে পরিণত হয়েছে। বৈশাখ এলেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে ওঠে এ উৎসবে। গত কয়েক বছর থেকে সরকারও দেয়া শুরু করেছে বৈশাখী ভাতা। যাতে উৎসবে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। মস্তক তুলে ধরি অনন্ত আকাশে; রবিঠাকুরের এই স্লোগান ধারণ করেই, এবার উদযাপিত হবে বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য স্বীকৃতি পাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালে ৩০ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্ক) মঙ্গল শোভাযাত্রাকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। শোভাযাত্রার এবারের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলার ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ ও বক, জাল ও জেলে, টেপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর আটটি শিল্পকাঠামো। এ ছাড়া রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রোববার (১৪ এপ্রির) সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মুখোশ পরা এবং ব্যাগ বহন করা যাবে না। তবে চারুকলা অনুষদের প্রস্তুত করা মুখোশ হাতে নিয়ে প্রদর্শন করা যাবে। কাজের ফাঁকে শিক্ষার্থী অমল সাহা জানালেন, সব কাজ শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের আল্পনা।

সবার সহযোগিতায় ঠিক সময়েই শেষ হয়েছে শোভাযাত্রার কাজ। একটু বেশি দরদ দিয়েই কাজটি করতে হচ্ছে। কোথাও কোনো ফাঁক রাখতে চায় না। কেননা সমগ্র বিশ্ব এখন এই শোভাযাত্রার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। পুরান ঢাকা থেকে চারুকলায় ঘুরতে আসা জোবায়ের রহমান জানান, আমার মতো সাধারণ মানুষের মধ্যে নববর্ষের প্রথমদিনে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার জন্য সারাবছর অপেক্ষায় থাকে। বিকেলে দেখতে এসেছি প্রস্তুতির কাজ কেমন চলছে। চারুকলার দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী নজরুল ইসলাম জানান, এবার নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আমি মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজ করছি। এ এক অন্যরকম অনুভ‚তি। প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।

বিভিন্ন অশুভ শক্তির মুখোশ বানানোর দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর। বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা ঢাকার আগেই শুরু হয়েছিল যশোরে। যশোরে শিল্পী এসএম সুলতানের অনুপ্রেরণায় কয়েকজন তরুণ চারুশিল্পী গড়ে তোলেন চারুপীঠ। উদ্দেশ্য শিশুদের চারুশিল্পে শিক্ষাদান। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ১৯৮৯ সালে ঢাকায় পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চারুকলা থেকে পাস করা শিল্পীদের সংগঠন চারুশিল্পী সংসদের সাথে তৎকালীন ছাত্ররাও যুক্ত হয়। নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, দেশের অগ্রসরমান পর্যটন শিল্পে মঙ্গল শোভাযাত্রার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একটি বড় অর্জন। বাংলাদেশে বেড়াতে আসা বিদেশিদের জন্য নিঃসন্দেহে এই সংবাদ বাড়তি আকর্ষণ জোগাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *