এবারের এইচএসসিতেও সাফল্য পেয়েও ভর্তির দুঃচিন্তায় সানজিদা

শিক্ষা

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা(রাজশাহী): সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ। সংসার দেখভাল করতে হয় মাকে। নিজের লেখা পড়াসহ বোনেরও খরচ যোগাতে হয় বড় ভাই ফয়সাল আহমেদকে। লেখা পড়ার ফাঁকে মাকে সহযোগিতা করেন সানজিদা আকতার। অর্থাভাবে প্রাইভেট পড়া হয়নি সানজিদা আকতারের। তবে ভালো ফলাফল দেখে সুবিধামতো সময়ে বিনা টাকায় প্রাইভেট পড়িয়েছেন দুই একজন শিক্ষক। অনেক বাঁধা বিপত্তির মধ্যেও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এবার এইচএসসিতেও চমক দেখিয়েছেন সেই সানজিদা আকতার। গত রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উপজেলার বাঘা হযরত শাহ্ আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ ফাজিল (ডিগ্রী) মাদরাসা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মায়ের হাতের কাজের টাকা আর ভাইয়ের সহযোগিতায় চলেছে সানজিদা আকতারের লেখাপড়া।

বাঘা পৌরসভার দক্ষিন মিলিকবাঘা গ্রামের বাসিন্দা,হাবিবুর-রিজিয়া দম্পত্তির একমাত্র মেয়ে সানজিদা আকতার।

লেখা পড়ার খরচ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার মা বলেন, এখন কিভাবে শহরের ভালো কলেজে পড়াব? মায়ের ভাষ্য মতে, অভাব অনটনের সংসারে ভালো পোষাকও দিতে পারেননি। নিজের প্রচেষ্টা আর তার ভাইয়ের সহযোগিতায় সাফল্য বয়ে এনেছে। ভাই বোনের মধ্যে সানজিদা আকতার ছোট। ৪ সদস্যর সংসার। বাড়িতে হাঁস মুরগি পালন আর হাতের কাজ করে সংসার চালাতে হয়।

জানা যায়, পল্লী চিকিৎসক বাবার আয়ে সংসার চলতো। ১০বছর ধরে তিনি অসুস্থ। দেশে চিকিৎসা নিয়ে ক্রমাগত উন্নতি না পেয়ে, ইন্ডিয়ায় চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন ২ বার। ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ মেটাতে স্থাবর অস্থাবর সম্পদও বিক্রি করতে হয়েছে।

সানজিদা আকতার জানান,জীবনের লক্ষ্য নিয়ে ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সুযোগ পেলে দেশ ও মানুষের কল্যাণে গবেষণায় আত্মনিয়োগই হবে তার জীবনের ব্রত। যদিও পরিবারের আর্থিক অনটন সেই স্বপ্নের অভিযাত্রায় বাঁধ সাধবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে সানজিদা আকতারের । তবে স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে আপ্রান চেষ্টা মা ভাইয়ের। মাদ্রাসার পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক নুরে আলম,রসায়নের আসমা বেগম, ইংরেজি পড়াতেন আশরাফুূল ইসলাম।

অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রউফ জানান, সাজজিদা আমার মাদরাসার মেধাবী শিক্ষার্থী। প্রতিকুলতাকে পেছনে ফেলে কিভাবে জয় করতে হয়,তা দেখিয়ে দিয়েছে। সে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে। আমার মাদরাসায় ভর্তি হলে তার জন্য সাধ্য মোতাবেক সার্বিক চেষ্টা করবো।
প্রভাষক আব্দুল হানিফ মিঞা বলেন, ভালো ফলাফলে মা-বাবারই নয়, এ্লাকার মুখও উজ্জল করেছে। তবে প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলেও মেধাকে কাজে লাগাতে অর্থের প্রয়োজন পড়ে।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *