স্বদেশ বাণী ডেস্ক: গত বেশ কয়েক বছর যাবত ঝালকাঠির মিষ্টিকুমড়া চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়ে আসছিলেন চাষিরা। এতে তারা তুলনামূলক অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিলেন। কিন্তু এ বছর লাভের আশায় বেশি জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ করে বিপদে পড়েছেন তারা। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিয়েছে জেলার মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতে। শত শত হেক্টর জমির কুমড়া এখন পাকতে শুরু করেছে। চাষিদের কাছে মিষ্টিকুমড়া বাজারজাত করার মুখ্য সময় এখন। কিন্তু দেশব্যাপী লকডাউনের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় প্রত্যন্ত এলাকার চাষ করা মিষ্টিকুমড়া বাজারজাত করতে না পারা এবং পাইকার না আসায় বিপাকে পড়েছেন তারা। বিক্রি করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। দুশ্চিন্তার রেখা তাঁদেরও কপালে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরী গ্রামের কুমড়ো চাষি তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষেতে গাছ বড় হয়ে অনেক মিষ্টিকুমড়া ধরেছে। পাকতেও শুরু করেছে। এরই মধ্যে দেশব্যাপী লক-ডাউন। বাজারেও নিতে পারছিনা, পাইকারদের কাছে বিক্রিও করতে পারছিনা। পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় পাইকাররা এসে গ্রাম থেকে কিনে নিচ্ছে না। এরই মধ্যে রবিবার দুপুরের শিলাবৃষ্টিতে মিষ্টিকুমড়ার গায়ে দাগ পড়েছে, কাচা কুমড়া ছিদ্র হয়ে পচন ধরেছে। চাষাবাদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে না বলেও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
একই গ্রামের বর্গা চাষি শাহ আলম জানান, তারা মিষ্টিকুমড়া সাথি ফসল হিসেবে আবাদ করেন। এ বছর আলু চাষ করে খুব একটা লাভ হয়নি। কুমড়া চাষ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন বলে আশা করেছেন। এ ছাড়া আমন ধান ওঠা পর্যন্ত কুমড়া বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচ মেটান তারা। কিন্তু এবার কুমড়া বাজারে নিতে না পারায় বিপদে পড়েছেন এলাকার কুমড়া চাষিরা।
নুরুল্লাপুর গ্রামের হাজী আবদুল হাই জানান, ২০-২৫ বছর ধরে তিনি মিষ্টিকুমড়া চাষ করছেন। এর আগে কুমড়া ক্ষেতে যেমন ফলন হয়েছে তেমন পাইকাররা এসে কিনে নেয়ায় প্রতিবছর বেশ লাভবান হয়েছেন। এ ধরনের মহামারি দেখা দেয়নি। লাভের আশায় অনেক বড় পুঁজি বিনিয়োগ করে তার পরিবার এখন ঝুঁকির মুখে।
অপরদিকে কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌ চাষিরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ক্ষেতে ফুল না থাকায় তারা মধু আহরণ করতে পারছেন না। মৌচাষি কাদের বলেন, ‘কুমড়া চাষিদের পাশাপাশি মৌ-খামারিরাও ক্ষতিতে পড়েছেন। এ মৌসুমে কুমড়া ক্ষেতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে নিজেরা যেমন বাঁচে তেমনি আমরাও আর্থিকভাবে লাভবান হই। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। মৌমাছিকে চিনি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে।’
কৃষি বিভাগ জানায়, বিশেষ করে কুমড়া একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে সমাদৃত এখন কৃষকদের কাছে। উৎপাদন খরচ কম, লাভ পাওয়ায় প্রতিবছর কুমড়া আবাদ করছেন কৃষক।
জানা গেছে, সার-বীজ, কীটনাশক, সেচ ও পরিচর্যা বাবদ প্রতি হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ার পরেও বাজারে নিতে পারছে না, বিক্রি করতে পারছে না পাইকারদের কাছেও। এ ক্ষতি পোষাবে কীভাবে এ নিয়ে অনেক কৃষক আহাজারি করছেন।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ২৬০হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ফজলুল হক মিয়া এ ব্যাপারে বলেন, ‘মিষ্টিকুমড়ো অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্যগুণ সম্পন্ন ফসল। কখনও কখনও হেলাফেলা করেও বাড়ির চালে বা ক্ষেতেও বাম্পার ফলন হয়। পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় মিষ্টিকুমড়া বাজারজাত করতে না পারায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা পেলে যথানিয়মে চাষিদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’
স্ব.বা/বা